দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ }} কামাখ্যা বাবু বলিলেন, “আমি আপনার নিকট শপথ করিতেছি, আমি রাধারাণীকে আপন কস্তার অধিক যত্ন করিব। আমি কায়মনোবাক্যে এ কথা কহিলাম ; আপনি বিশ্বাস করুন।” যিনি মুমূর্ষ তিনি কামাখ্যা বাবুর চক্ষের জল দেখিয়, তাহার কথায় বিশ্বাস করিলেন। র্তাহার সেই শীর্ণ শুষ্ক অধরে একটু আহলাদের হাসি দেখা দিল। হাসি দেখিয়া কামাখ্যা বাৰু বুঝিলেন, ইনি আর বঁাচিবেন না। কামাখ্যা বাৰু তাহাকে বিশেষ করিয়া অনুরোধ করিলেন যে, এক্ষণে আমার গৃহে চলুন। পরে ভদ্রাসন দখল হইলে আসিবেন। রাধারাণীর মাতার যে অহঙ্কার, সে দারিদ্র্যজনিত—এজন্য দারিদ্র্যাবস্থায় তাহার গৃহে যাইতে চাহেন নাই। এক্ষণে আর দারিদ্র্য নাই, সুতরাং আর সে অহঙ্কারও নাই। এক্ষণে তিনি যাইতে সম্মত হইলেন। কামাখ্যা বাবু, রাধরাণী ও তাহার মাতাকে সযত্নে নিজালয়ে লইয়া গেলেন। তিনি রীতিমত পীড়িতার চিকিৎসা করাইলেন। কিন্তু তাহার জীবন রক্ষ হইল না, অল্পদিনেই তাহার মৃত্যু হইল। উপযুক্ত সময়ে কামাখ্যা বাবু রাধাপ্ৰাণীকে তাহার সম্পত্তিতে দখল দেওয়াইলেন। “ কিন্তু রাধারাণী বালিকা বলিয়া তাহাকে নিজ বাটতে এক থাকিতে দিলেন না, আপন গৃহেই রাখিলেন । , কালেক্টর সাহেব, রাধারাণীর সম্পত্তি কোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনে আনিবার জন্ত যত্ন পাইলেন, কিন্তু কামাখ্যা বাবু বিবেচনা করিলেন, আমি রাধারাণীর জন্য যতদূর করিব, সরকারি কর্মচারিগণ ততদূর করিবে না। কামাখ্যা বাবুর কৌশলে কালেক্টর সাহেব নিরস্ত হইলেন। কামাখ্যা বাবু স্বয়ং রাধারাণীর সম্পত্তির তত্ত্বাবধান করিতে লাগিলেন। বাকি রাধারাণীর বিবাহ। কিন্তু কামাখ্যা বাবু নব্যতন্ত্রের লোক—বাল্যবিবাহে তাহার দ্বেষ ছিল । তিনি বিবেচনা করিলেন যে, রাধারাণীর বিবাহ তাড়াতাড়ি না দিলে, জাতি গেল মনে করে, এমত কেহ তাহার নাই। অতএব যবে রাধারাণী, স্বয়ং বিবেচনা করিয়া বিবাহে ইচ্ছুক হইবে, তবে তাহার বিবাহ দিব। এখন সে লেখাপড়া শিখুক । এই ভাবিয়া কামাখ্যা বাৰু রাধারাণীর বিবাহের কোন উদ্যোগ না করিয়া, তাহাকে উত্তমরূপে সুশিক্ষিত করাইলেন।
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।