পঞ্চম পরিচ্ছেদ s૧ উত্তরকারী বলিলেন, “একটি কৌতুকের জন্য। আজি আট দশ বৎসর হইল, আমি যেখানে সেখানে বেড়াইতাম—কিন্তু লোকলজ্জাভয়ে আপনার নামটা গোপন করিয়া কাল্পনিক নাম ব্যবহার করিতাম। কাল্পনিক নাম রুক্মিণীকুমার। আপনি অত বিমন হইতেছেন কেন ?” রাধারাণী একটু স্থির হইলেন—আগম্ভক বলিতে লাগিলেন—“যথার্থ রুক্মিণীকুমার নাম ধরে, এমন কাহাকেও চিনি না। যদি কেহ আমারই তল্লাস করিয়া থাকে-তাহ সম্ভব নহে—তথাপি কি জানি—সাত পাঁচ ভাবিয়া বিজ্ঞাপনটি তুলিয়া রাখিলাম—কিন্তু কামাখ্যা বাবুর কাছে আসিতে সাহস হইল না।” “পরে ?” “পরে কামাখ্যা বাবুর শ্রাদ্ধে তাহার পুত্ৰগণ আমাকে নিমন্ত্ৰণ করিল, কিন্তু আমি কাৰ্য্যগতিকে আসিতে পারি নাই। সম্প্রতি সেই ক্রটির ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য র্তাহার পুত্রদিগের নিকট আসিলাম । কৌতুকবশতঃ বিজ্ঞাপন সঙ্গে আনিয়াছিলাম। প্রসঙ্গক্রমে উহার কথা উত্থাপন করিয়া কামাখ্যা বাবুর জ্যেষ্ঠ পুত্রকে জিজ্ঞাসা করিলাম যে, এ বিজ্ঞাপন কেন দেওয়া হইয়াছিল ? কামাখ্যা বাবুর পুত্র বলিলেন যে, রাধারাণীর অনুরোধে । আমিও এক রাধারাণীকে চিনিতাম—এক বালিকা—আমি এক দিন দেখিয়া তাহাকে আর ভুলিতে ‘ পারিলাম না। সে মাতার পথ্যের জন্য, আপনি অনাহারে থাকিয়া বনফুলের মাল৷ গাথিয়া— সেই অন্ধকার বৃষ্টিতে—” বক্তা আর কথা কহিতে পারিলেন না—তাহার চক্ষু জলে পুরিয়া গেল। রাধারাণীরও চক্ষু জলে ভাসিতে লাগিল । চক্ষু মুছিয়া রাধারাণী বলিল, “ইতর লোকের কথায় এখন প্রয়োজন কি ? আপনার কথা বলুন ।” আগন্তুক উত্তর করিলেন, “রাধারাণী ইতর লোক নহে। যদি সংসারে কেহ দেবকস্তা থাকে, তবে সেই রাধারাণী । যদি কাহাকে পবিত্র, সরলচিত্ত, এ সংসারে আমি দেথিয়া থাকি, তবে সেই রাধারাণী—যদি কাহারও কথায় অমৃত থাকে, তবে সেই রাধারাণী— যথার্থ অমৃত । বর্ণে বর্ণে অঙ্গরার বীণা বাজে, যেন কথা কহিতে বাধ বাধ করে অথচ সকল কথা পরিষ্কার, সুমধুর,—অতি সরল ! আমি এমন কণ্ঠ কখন শুনি নাই—এমন কথা কখনও শুনি নাই ।” রুক্মিণীকুমার-এক্ষণে ইহাকে রুক্মিণীকুমারই বলা যাউক—ঐ সঙ্গে মনে মনে বলিলেন, “আবার আজ বুঝি তেমনি কথা শুনিতেছি।” রুক্মিণীকুমার মনে মনে ভাগিছেছিলেন, আজি এত দিন হইল, সেই বালিকার কণ্ঠস্বর শুনিয়ছিলাম, ঠিক আজিও সে কণ্ঠ আমার মনের ভিতর জাগিতেছে। যেন কাল ఘో
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।