রাধারাণী কেমন করে এমন করে কথা কয় গা . রাধারাণী মনে মনে একটু পরিতাপ করিল ; কেন মা, কথাটা একটু ভংসনার মত হইল। রুক্মিণীকুমার একটু অপ্রতিভ হইয়া বলিলেন,—“তাই বলিতেছিলাম। আমি সেই রাধারাণীকে চিনিতাম—রাধারাণীকে মনে পড়িল, একটু—এতটুকু—অন্ধকার রাত্রে জোনাকির স্বায়—একটু আশা হইল যে, যদি এই রাধারাণী আমার সেই রাধারাণী হয় ।” “তোমার রাধারাণী।” রাধারাণী ছল ধরিয়া চুপি চুপি এই কথাটি বলিয়া, মুখ নত করিয়া ঈষৎ ঈষৎ হাসিল। ই গ, ন হেসে কি থাকা যায় গা ? তোমরা আমার রাধারাণীর নিন্দ করিও না । রুক্মিণীকুমারও মনে মনে ছল ধরিল—এ তুমি বলে কেন ? কে এ ? প্রকাশ্বে বলিল, “আমারই রাধারাণী । আমি একরাত্রি মাত্র তাহাকে দেখিয়া-দেখিয়াছিই বা কেমন করিয়া বলি—এই আট বৎসরেও তাহাকে ভুলি নাই। আমারই রাধারাণী ।” রাধারাণী বলিল, “হোক আপনারই রাধারাণী ।” রুক্মিণী বলিতে লাগিলেন, “সেই ক্ষুদ্র আশায় আমি কামাখ্যা বাবুর জ্যেষ্ঠ পুত্রকে “ জিজ্ঞাসা করিলাম, রাধারাণী কে ? কামাখ্যা বাবুর পুত্ৰ সবিস্তারে পরিচয় দিতে বোধ হয় । অনিচ্ছুক ছিলেন ; কেবল বলিলেন, “আমাদিগের কোন আত্মীয়ার কন্যা। যেখানে তাহাকে অনিচ্ছুক দেখিলাম, সেখানে আর অধিক পীড়াপীড়ি করিলাম না, কেবল জিজ্ঞাসা করিলাম, রাধারাণী কেন রুক্মিণীকুমারের সন্ধান করিয়াছিলেন, শুনিত্বে পাই কি ? যদি প্রয়োজন হয় ত বোধ করি, আমি কিছু সন্ধান দিতে পারি। আমি এই কথা বলিলে, তিনি বলিলেন, ‘কেন রাধারাণী রুক্মিণীকুমারকে খুজিয়াছিলেন, তাহা আমি সবিশেষ জানি না ; আমার পিতৃঠাকুর জানিতেন ; বোধ করি, আমার ভগিনী ও জানিতে পারেন । যেখানে আপনি সন্ধান দিতে পারেন বলিতেছেন, সেখানে আমার ভগিনীকে জিজ্ঞাসা করিয়া আসিতে হইতেছে।” এই বলিয়া তিনি উঠিলেন। প্রত্যাগমন করিয়া তিনি আমাকে যে পত্র দিলেন, সে পত্র আপনাকে দিয়াছি। তিনি আমাকে সেই পত্ৰ দিয়া বলিলেন, আমার ভগিনী সবিশেষ কিছু ভাঙ্গিয়া চুরিয়া বলিলেন না, কেবল এই পত্র দিলেন, আর বলিলেন যে, এই পত্র লইয়। তাহাকে স্বয়ং রাজপুরে যাইতে বলুন। রাজপুরে যিনি অন্নসত্র দিযুগছেন, তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে বলিবেন। আমি সেই পত্র লইয়া আপনার কাছে আসিয়াছি। কোন অপরাধ করিয়াছি কি ?”
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।