는 রাধীরাণী রাধারাণী বলিল, “জানি না। বোধ হয় যে, আপনি মহাভ্রমে পতিত হইয়াই এখানে আসিয়াছেন। আপনার রাধারণী কে, তাহা আমি চিনি কি না, বলিতে পারিতেছি না । সে রাধারাণীর কথা কি, শুনিলে বলিতে পারি, আম হইতে তাহার কোন সন্ধান পাওয়া যাইবে কি না ।” - রুক্মিণী সেই রথের কথা সবিস্তারে বলিলেন, কেবল নিজদত্ত অর্থ বস্ত্রের কথা কিছু বলিলেন না। রাধারাণী বলিলেন—“স্পষ্ট কথা মার্জনা করিবেন। আপনাকে রাধারাণীর কোন কথা বলিতে সাহস হয় না ; কেন না, আপনাকে দয়ালু লোক বোধ হইতেছে না। যদি আপনি সেরূপ দয়ার্ডচিত্ত হইতেন, তাহা হইলে আপনি যে ভিখারী বালিকার কথা বলিলেন, তাহাকে অমন ছৰ্দশাপন্ন দেখিয়া অবশ্ব তার কিছু আনুকূল্য করিতেন। কই, আমুকুল্য করার কথা ত কিছু আপনি বলিলেন না ?” রুক্মিণীকুমার বলিলেন, “আমুকূল্য বিশেষ কিছুই করিতে পারি নাই। আমি সে দিন নৌকাপথে রথ দেখিতে আসিয়াছিলাম–পাছে কেহ জানিতে পারে, এই জন্ত ছদ্মবেশে রুক্মিণীকুমার রায় পরিচয়ে লুকাইয়া আসিয়াছিলাম—অপরাহ্লে ঝড় বৃষ্টি হওয়ায় বোটে থাকিতে সাহস না করিয়া এক তটে উঠিয়া আসিয়াছিলাম। সঙ্গে যাহা অল্প ছিল, তাহা রাধারাণীকেই দিয়াছিলাম ; কিন্তু সে অতি সামান্ত । পরদিন প্রাতে আসিয়া উহাদিগের বিশেষ সংবাদ লইব মনে করিয়াছিলাম, কিন্তু সেই রাত্রে আমার পিতার পীড়ার সংবাদ পাইয়। তখনই আমাকে কাশী যাইতে হইল। পিতা অনেক দিন হইয়া রহিলেন, কাশী হইতে প্রত্যাগমন করিতে আমার বৎসরাধিক বিলুম্ব হইল। বৎসর পরে আমি ফিরিয়া আসিয়া আবার সেই কুটীরের সন্ধান করিলাম—কিন্তু তাহাদিগকে আর সেখানে দেখিলাম না ।” র। একটি কথা জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা করিতেছে। বোধ হয়, সে রথের দিন নিরাশ্রয়ে, বৃষ্টি বাদলে, আপনাকে সেই কুটীরেই আশ্রয় লইতে হইয়াছিল। আপনি কতক্ষণ সেখানে অবস্থিতি করিলেন ? . . রু । অধিকক্ষণ নহে। আমি যাহা রাধারাণীর হাতে দিয়াছিলাম, তাহ দেখিবার জন্ত রাধারাণী আলো জালিতে গেল—আমি সেই অবসরে তাহার বস্ত্র কিনিতে চলিয়া আসিলাম । রাধা । আর কি দিয়া আসিলেন ? রু। আর কি দিব ! একখানি ক্ষুদ্র নোট ছিল, তাহাকুটারে রাখিয়া আসিলাম।
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।