ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ ૨૪ রা। নোটখানি ওরূপে দেওয়া বিবেচনাসিদ্ধ হয় নাই—তাহারা মনে করিতে পারে, আপনি নোটখানি কারাইয়া গিয়াছেন । রু । না, আমি পেন্সিলে লিখিয়া দিয়াছিলাম, “রাধারাণীর জন্ত ।” তাহাতে নাম স্বাক্ষর করিয়াছিলাম, “রুক্মিণীকুমার রায়।” যদি সেই রুক্মিণীকুমারকে সেই রাধারাণী অন্বেষণ করিয়া থাকে, এই ভরসায় বিজ্ঞাপনটি তুলিয়া রাখিয়াছিলাম। রাধা । তাই বলিতেছিলাম, আপনাকে দয়ার্কচিত্ত বলিয়া বোধ হয় না। যে রাধারাণী আপনার শ্ৰীচরণ দর্শন জন্য—এইটুকু বলিতেই—আ ছি ছি রাধারাণী ! ফুলের কুড়ির ভিতর যেমন বৃষ্টির জল ভরা থাকে, ফুলটি নীচু করিলেই ঝর ঝর করিয়া পড়িয়া যায়, রাধারাণী মুখ নত করিয়া এইটুকু বলিতেই, তাহার চোখের জল ঝরঝর করিয়া পড়িতে লাগিল। অমনই যে দিকে রুক্মিণীকুমার ছিলেন, সেই দিকের মাথার কাপড়টা বেশী করিয়া টানিয়া দিয়া সে ঘর হইতে রাধারাণী বাহির হইয়া গেল। রুক্মিণীকুমার বোধ হয়, চক্ষের জলটুকু দেখিতে পান নাই, কি পাইয়াই থাকিবেন, বলা যায় না। बृढ़ॆ श्रहितिच्छ्रतः। বাহিরে আসিয়া, মুখে চক্ষে জল দিয়া অশ্রুচিহ্ন বিলুপ্ত করিয়া, রাধারাণী ভাবিতে লাগিল। ভাবিল, “ইনিই ত রুক্মিণীকুমার। আমিও সেই রাধারাণী। দুই জনে দুই জনের জন্য মন তুলিয়া রাখিয়াছি। এখন উপায় ? আমি যে রাধারাণী, তা উহাকে বিশ্বাস করাইতে পারি—তার পর ? উনি কি জাতি, তা কে জানে। জাতিটা এখনই জানিতে পারা যায়। কিন্তু উনি যদি আমার জাতি না হন । তবে ধৰ্ম্মবন্ধন ঘটিবে না, চিরস্তনের যে বন্ধন, তাহা ঘটিবে না, প্রাণের বন্ধন ঘটিবে না। তবে আর উহার সঙ্গে কথায় কাজ কি ? না হয় এ জন্মটা রুক্মিণীকুমার নাম জপ করিয়া কাটাইব। এত দিন সেই জপ করিয়া কাটাইয়াছি, জোয়ারের প্রথম বেগট। কাটিয়া গিয়াছে—বাকি কাল কাটিবে না কি ?” এই ভাবিতে ভাবিতে রাধারাণীর আবার নাকের পাট ফাপিয়া উঠিল, ঠোঁট ফুখান৷ ফুলিয়া উঠিল—আবার চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল। আবার সে জল দিয়া মুখ চোখ ধুইয়া টোয়ালিয়া দিয়া মুছিয়া ঠিক হইয়া আসিল। রাধারাণী আবার ভাবিতে লাগিল,—
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।