રર রাধীরাণী “আচ্ছা । যদি আমার জাতিই হন, তা হলেই বা ভরসা কি ? উনি ত দেখিতেছি বয়ঃপ্রাপ্ত –কুমার, এমন সম্ভাবনা কি ? তা হলেনই বা বিবাহিত ? না। না ! তা হইবে না। নাম জপ করিয়া মরি, সে অনেক ভাল—সতীন সহিতে পারিব না।” “তবে এখন কর্তব্য কি ? জাতির কথাটা জিজ্ঞাসা করিয়াই কি হইবে ? তবে রাধারাণীর পরিচয়টা দিই। আর উনি কে, তাহ জানিয়া লই ; কেন না, রুক্মিণীকুমার ত ওঁর নাম নয়—তা ত শুনিলাম। যে নাম জপ করিয়া মরিতে হইবে, তা শুনিয়া লই । তার পর বিদায় দিয়া কাদিতে বসি । আ পোড়ারমুখী বসন্ত । না বুঝিয়, না জানিয়া এ সামগ্ৰী কেন পাঠাইলি ! জানিস্ না কি, এ জীবনসমুদ্র অমন করিয়া মন্থন করিতে গেলে, কাহারও কপালে অমৃত, কাহারও কপালে গরল উঠে ! “আচ্ছা ! পরিচয়টা ত দিই।” এই ভাবিয়া রাধারাণী, যাহ। প্রাণের অধিক যত্ন করিয়া তুলিয়া রাখিয়াছিল, তাহ বাহির করিয়া আনিল । সে সেই নোটখানি। বলিয়াছি, রাধারাণী তাহা তুলিয়। রাখিয়াছিল। রাধারাণী তাহা আঁচলে বাধিল । বাধিতে বাধিতে ভাবিতে লাগিল— 带 • * “আচ্ছ, যদি মনের বাসনা পূরিবার মতনই হয় ? তবে শেষ কথাটা কে বলিবে ?” এই ভাবিয়া রাধারাণী আপন আপনি হাসিয়া কুটপাট হইল। “আ, ছি—ছি—ছি! তাত আমি পারিব না। বসন্তকে যদি আনাইতাম ! ভাল, উহাকে এখন ছুদিন বসাইয়। রাখিয়৷ বসস্তুকে আনাইতে পারিব না ? উনি মা হয় সে দুই দিন আমার লাইব্রেরি হইতে বহি লইয়। পড়ুন না। পড়া শুনা করেন না কি ? ওঁরই জন্ত ত লাইব্রেরি করিয়া রাখিয়াছি। তা যদি দুই দিন থাকিতে রাজি না হন ? উহার যদি কাজ থাকে ? তবে কি হবে ? ওঁতে আমাতেই সে কথাটা কি হবে ? ক্ষতি কি, ইংরেজের মেয়ের কি হয় ? আমাদের দেশে তাতে নিন্দ আছে, তা আমি দেশের লোকের নিন্দার ভয়ে কোন কাজটাই করি ? এই যে উনিশ বছর বয়স পর্য্যন্ত আমি বিয়ে করলেম না, এতে কে না কি বলে ? আমি ত বুড়া বয়স পৰ্য্যন্ত কুমারী —ত এ কাজটাও না হয় ইংরেজের মেয়ের মত হইল।” ভার পর রাধারাণী বিষণ্ণ মনে ভাবিল, “তা যেন হলো ; তাতেও বড় গোল ! মমবাতিতে গড়া মেয়েদের মাঝখানে প্রথাটা এই যে, পুরুষ মানুষেই কথাটা পাড়িবে। ইনি যদি কথাটা না পাড়েন ? না পড়েন, তবে—তবে হে ভগবান । বলিয়া দাও, কি করিব । লজ্জাও তুমি গড়িয়াছ—যে আগুনে আমি পুড়িতেছি, ভাহাও তুমি গড়িয়াছ ! এ আগুনে সে গঙ্গা কি পুড়িবে না ? তুমি এই সহায়হীন অনাথাকে দয়া করিয়া, পবিত্রতার আবরণে
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।