প্রথম খণ্ড রজনীর কথা প্রথম পরিচ্ছেদ তোমাদের মুখছুঃখে আমার সুখদুঃখ পরিমিত হইতে পারে না। তোমরা আর আমি ভিন্নপ্রকৃতি। আমার মুখে তোমরা সুখী হইতে পরিবে না—আমার দুঃখ তোমরা বুঝিবে না—আমি একটি ক্ষুদ্র যুথিকার গন্ধে সুখী হইব ; আর ষোলকলা শশী আমার লোচনাগ্রে সহস্ৰ নক্ষত্রমণ্ডলমধ্যস্থ হইয়া বিকসিত হইলেও আমি সুখী হইব না—আমার উপাখ্যান কি তোমরা মন দিয়া শুনিবে ? আমি জন্মান্ধ। কি প্রকারে বুঝিবে ? তোমাদের জীবন দৃষ্টিময়—আমার জীবন অন্ধকার—দুঃখ এই, আমি ইহা অন্ধকার বলিয়া জানি না। আমার এ রুদ্ধ নয়নে, তাই আলো ! না জানি তোমাদের আলো কেমন ! তাই বলিয়া কি আমার মুখ নাই ? তাহী নহে। সুখ দুঃখ তোমার আমার প্রায় সমান। তুমি রূপ দেখিয়া সুখী, আমি শব্দ শুনিয়াই মুখী। দেখ, এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যুথিকাসকলের বৃস্তুগুলি কত সূক্ষ্ম, আর আমার এই করস্থ সূচিকাগ্রভাগ আরও কত সূক্ষ্ম । আমি এই সূচিকাগ্রে সেই ক্ষুদ্র পুষ্পবৃন্তসকল বিদ্ধ করিয়া মালা গাথি—আশৈশব মালাই গাথিয়াছি—কেহ কখন আমার গাথা মালা পরিয়া বলে নাই যে, কাশায় মালা গাথিয়াছে। আমি মালাই গাথিতাম। বালিগঞ্জের প্রান্তভাগে আমার পিতার একখানি পুষ্পোস্তান জমা ছিল—তাহাই তাহার উপজীবিকা ছিল। ফাঙ্কন মাস হইতে যত দিন ফুল ফুটিত, তত দিন পর্য্যস্ত পিতা প্রত্যহ তথা হইতে পুষ্পচয়ন করিয়া আনিয়া দিতেন, আমি মালা গাথিয় দিতাম। পিতা তাহ লইয়া মহানগরীর পথে পথে বিক্রয় করিতেন। মাতা গুহকৰ্ম্ম করিতেন। অবকাশমতে পিতামাতা উভয়েই আমার মালা গাথার সহায়তা করিতেন । ফুলের স্পর্শ বড় সুন্দর–পরিতে বুঝি বড় সুন্দর হইবে—ম্রাণে পরম মুন্দর বটে। কিন্তু ফুল গাধিয়া দিন চলে না। অন্ধের ক্ষের ফুল নাই। সুতরাং পিতা নিতান্ত দরিত্র
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।