अॅथनौ فقا মুক্তহস্ত, হৃদয়ে সরল, কেবল বাক্যে বিষময়ী। লবঙ্গলতার অশেষ গুণের মধ্যে, একটি এই যে, তিনি বাস্তবিক পিতামহের তুল্য সেই স্বামীকে ভালবাসিতেন—কোন নবীন নবীন স্বামীকে সেরূপ ভালবাসেন কি না সন্দেহ । ভালবাসিতেন বলিয়, তাহাকে নবীন সাজাইতেন—সে সজ্জার রস কাহাকে বলি ? আপন হস্তে নিত্য শুভ্ৰ কেশে কলপ মাখাইয়া কেশগুলি রঞ্জিত করিতেন। যদি রামসদয় লজ্জার অনুরোধে কোন দিন মলমলের ধুতি পরিত, স্বহস্তে তাহা ত্যাগ করাইয়া কোকিলপেড়ে, ফিতেপেড়ে, কঙ্কাপেড়ে পরাইয়া দিতেন —মলমলের ধুতিখানি তৎক্ষণাৎ বিধবা দরিত্রগণকে বিতরণ করিতেন। রামসদয় প্রাচীন বয়সে, আতরের শিশি দেখিলে ভয়ে পলাইত—লবঙ্গলত, তাহার নিদ্রিতাবস্থায় সৰ্ব্বাঙ্গে জাঙ্গর মাখাইয়া দিতেন। রামসদয়ের চলমাগুলি, লবঙ্গ প্রায় চুরি করিয়া ভাঙ্গিয়া ফেলিত, সোণাটুকু লইয়া, যাহার কস্তার বিবাহের সম্ভাবন, তাহাকে দিত। রামসদয়ের নাক জ্ঞাকিলে, লবঙ্গ ছয়গাছ৷ মল বাহির করিয়া, পরিয়া ঘরময় ঝম্ঝম করিয়া, রামসদয়ের মিজা ভাঙ্গিয়া দিত । লবঙ্গলতা আমাদের ফুল কিনিত—চারি আনার ফুল লইয়া দুই টাকা মূল্য দিত। তাহার কারণ, আমি কাণ । মালা পাইলে, লবঙ্গ গালি দিত, বলিত, এমন কদৰ্য্য মাল৷ আমাকে দিল কেন ? কিন্তু মূল্য দিবার সময় ডবল প্ৰয়সার সঙ্গে ভুল করিয়া টাকা দিত। ফিরাইয়। দিতে গেলে বলিত--ও আমার টাকা নয়—হুইবার বলিতে গেলে গালি দিয়া তাড়াইয়া দিত। তাহার দানের কথা মুখে আনিলে মারিতে আসিত । বাস্তবিক, রামসদয় ৰাৰুর ঘর না থাকিলে, আমাদিগের দিনপাত হইত না ; তবে যাহা রয় সয়, তাই ভাল বলিয়া, মাতা, লবঙ্গের কাছে অধিক লইতেন না। দিনপাত হইলেই আমরা সন্তুষ্ট থাকিতাম। লবঙ্গলতী আমাদিগের নিকট রাশি রাশি ফুল কিনিয়া রামসদয়কে সাজাইত । সাজাইয়া বলিত—দেখ, রতিপতি । রামসদয় বলিত—দেখ, সাক্ষাৎ—অঞ্জনানন্দন। সেই প্রাচীনে নবীনে মনের মিল ছিল—দর্পণের মত দুই জনে দুই জনের মন দেখিতে পাইত। ডtহাদের প্রেমের পদ্ধতিটা এইরূপ— - রামসদয় বলিত, “ললিভলবঙ্গলতাপরিশী—?” লবঙ্গ । আজ্ঞে ঠাকুরদাদামহাশয়, দাসী হাজির । রাম। আমি যদি মরি ? লব । “আমি তোমার বিষয় খাইব ।” লবঙ্গ মনে মনে বলিত, “আমি বিষ tাইব ।” রামসদয় তাহা মনে মনে জানিত ।
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।