懿 د« থাকে যাকে লোকে সুন্দর বলে, সে সব দেখিতে কেমন ? তোমার হৃদয়ে যে অসংখ্য, বহুপ্রকৃতিবিশিষ্ট জন্তুগণ বিচরণ করে, তারা সব দেখিতে কেমন ? বল মা, তোমার হৃদয়ের সারভূত, পুরুষ জাতি দেখিতে কেমন? দেখাও মা, তাহার মধ্যে, যাহার করম্পর্শে এত মুখ, সে দেখিতে কেমন? দেখা মা, দেখিতে কেমন দেখায় ? দেখা কি ? দেখা কেমন ? দেখিলে কিরূপ সুখ হয় ? এক মুহূৰ্ত্তজন্ত এই মুখময় স্পর্শ দেখিতে পাই না? দেখা মা ! বাহিরের চক্ষু নিমীলিত থাকে থাকুক মা ! আমার হৃদয়ের মধ্যে চক্ষু ফুটাইয়া দে, আমি একবার অস্তরের ভিতর অন্তর লুকাইয়া, মনের সাধে রূপ দেখে, নারীজন্ম সার্থক করি। সবাই দেখে—আমি দেখিব না বেন ? বুঝি কীট পতঙ্গ অবধি দেখে—আমি কি অপরাধে দেখিতে পাই না ? শুধু দেখা—কারও ক্ষতি নাই, কারও কষ্ট নাই, কারও পাপ নাই, সবাই অবহেলে দেখে—কি দোষে আমি কখনও দেখিব না ? না ! না ! অদৃষ্টে নাই। হৃদয়মধ্যে খুজিলাম। শুধু শব্দ স্পর্শ গন্ধ। আর কিছু পাইলাম না। আমার অন্তর বিদীর্ণ করিয়া ধ্বনি উঠিতে লাগিল, কে দেখাবি দেখা গো—আমায় রূপ দেখা ! বুঝিল না । কেহই অন্ধের দুঃখ বুঝিল না। তৃতীয় পরিচ্ছেদ সেই অবধি আমি প্রায় প্রত্যহ রামসদয় মিত্রের বাড়ী ফুল বেচিতে যাইতাম । কিন্তু কেন, তাহা জানি না । যাহার নয়ন নাই, তাহার এ যত্ন কেন ? সে দেখিতে পাইবে না— কেবল কথার শব্দ শুনিবার ভরসা মাত্র। কেন শচীন্দ্র বাবু আমার কাছে আসিয়া কথা কহিবেন ? তিনি থাকেন সদরে—আমি যাই অন্তঃপুরে। যদি তাহার স্ত্রী থাকিত, তবেও বা কখন আসিতেন। কিন্তু বৎসরেক পূৰ্ব্বে র্তাহার স্ত্রীর মৃত্যু হইয়াছিল—আর বিবাহ করেন নাই। অতএব সে ভরসাও নাই । কদাচিৎ কোন প্রয়োজনে মাতাদিগের নিকটে আসিতেন। আমি যে সময়ে ফুল লইয়া যাইব, তিনিও ঠিক সেই সময়ে আসিবেন, তাহারই বা সম্ভাবনা কি ? অতএব যে এক শব্দ শুনিবার মাত্র আশা, তাহাও বড় সফল হইত না । তথাপি অন্ধ প্রত্যহ ফুল লইয়া যাইত। কোন দুরাশায়, তাহ জানি না। নিরাশ হইয়া ফিরিয়া আসিবার সময় প্রত্যহ ভাবিতাম, আমি কেন আসি ? প্রত্যহ মনে করিতাম, আর আসিব না। প্রত্যহই সে কল্পনা বৃথা হইত। প্রত্যহই আবার যাইতাম। যেন কে চুল
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।