প্রথম খণ্ড : চতুর্থ পরিচ্ছেদ סל এই ভূমণ্ডলে রজনীনামে ক্ষুদ্র বিন্দু কেমন দেখায় ? আমাকে দেখিলে, কখনও কি কাহার আবার ফিরিয়৷ দেখিতে ইচ্ছা হয় নাই ? এমন নীচাশয়, ক্ষুদ্র কেহ কি জগতে নাই যে, আমাকে সুন্দর দেখে ? নয়ন না থাকিলে নারী মুন্দরী হয় না—আমার নয়ন নাই—কিন্তু তবে কারিগরে পাথর খোদিয়া চক্ষুশূন্ত মূৰ্ত্তি গড়ে কেন ? আমি কি কেবল সেইরূপ পাৰাণী মাত্র ? তবে বিধাতা এ পাষাণমধ্যে এ সুখদুঃখসমাকুল প্রণয়লালসাপরবশ হৃদয় কেন পুরিল ? পাষাণের দুঃখ পাইয়াছি, পাষাণের সুখ পাইলাম না কেন ? এ সংসারে এ তারতম্য কেন ? অনন্ত তুষ্কৃতকারীও চক্ষে দেখে, আমি জন্মপূৰ্ব্বেই কোন দোষ করিয়াছিলাম যে, আমি চক্ষে দেখিতে পাইব না ? এ সংসারে বিধাতা নাই, বিধান নাই, পাপপুণ্যের দও পুরস্কার নাই—আমি মরিব । - আমার এই জীবনে বহু বৎসর গিয়াছে—বহু বৎসর আসিতেও পারে। বৎসরে বৎসরে । বহু দিবস—দিবসে দিবসে বহু দগু—দণ্ডে দণ্ডে বহু মুহূৰ্ত্ত—তাহার মধ্যে এক মুহূৰ্ত্ত জন্য, এক পলক জন্য, আমার কি চক্ষু ফুটিবে না ? এক মুহূৰ্ত্ত জহু, চক্ষু মেলিতে পারিলে দেখিয়া লই, এই শব্দস্পর্শময় বিশ্বসংসার কি—আমি কি—শচীন্দ্র কি ? চতুর্থ পরিচ্ছেদ আমি প্রত্যহই ফুল লইয়। যাইতাম, ছোট বাবুর কথার শব্দশ্রবণ প্রায় ঘটিত না— কিন্তু কদাচিৎ তুই একদিন ঘটিত। সে আহলাদের কথা বলিতে পারি না। আমার বোধ হইত, বর্ষার জলভরা মেঘ যখন ডাকিয়া বর্ষে, তখন মেঘের বুঝি সেইরূপ আহলাদ হয় ; আমারও সেইরূপ ডাকিতে ইচ্ছা করিত। আমি প্রত্যহ মনে করিতাম, আমি ছোটবাবুকে কতকগুলি বাছা ফুলের তোড়া বাধিয়া দিয়া আসিব—কিন্তু তাহ একদিনও পারিলাম না । একে লজ্জা করিত—আবার মনে ভাবিতাম, ফুল দিলে তিনি দাম দিতে চাহিবেন—কি বলিয়া না লইব ? মনের দুঃখে ঘরে আসিয়া ফুল লইয়া ছোটবাবুকেই গড়িতাম। কি গড়িতাম, তাহ জানি না—কখন দেখি নাই। এদিকে আমার যাতায়াতে একটি অচিন্তনীয় ফল ফলিতেছিল—আমি তাহার কিছুই জানিতাম না । পিতা মাতার কথোপকথনে তাহ প্রথম জানিতে পারিলাম। একদিন সন্ধ্যার পর, আমি মালা গাঁথিতে গাঁথিতে ঘুমাইয়া পড়িয়াছিলাম। কি একটা শব্দে নিত্র
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।