ब्रछनेौ אפו গোবিন্দ বাবু বলিলেন, “হরেকৃষ্ণ তাহার নাম রজনী রাখিয়াছিলেন।" ইছার অল্প দিন পরেই আমি কাশী পরিত্যাগ করিলাম । তৃতীয় পরিচ্ছেদ প্রথমে আমাকে বুঝিতে হইতেছে, আমি কি খুজি । চিত্ত আমার দুঃখময়, এ সংসার আমার পক্ষে অন্ধকার। আজি আমার মৃত্যু হইলে, আমি কাল চাহি না । যদি ফুঃখ নিবারণ করিতে না পরিলাম, তবে পুরুষত্ব কি ? কিন্তু ব্যাধির শান্তি করিতে গেলে আগে ব্যাধির নির্ণয় চাহি । দুঃখ নিবারণের আগে আমার দুঃখ কি, তাহ নিরূপণের আবশ্বক। দুঃখ কি ? অভাব। সকল দুঃখই অভাব। রোগ দুঃখ ; কারণ, রোগ স্বাস্থ্যের অভাব। অভাবমাত্রই দুঃখ নহে, তাহ জানি। রোগের অভাব দুঃখ নহে। অভাবৰিশেষই ছুঃখ । আমার কিসের অভাব ? আমি চাই কি ? মনুষই চায় কি ? ধন ? আমার যথেষ্ট আছে । যশ: ? পৃথিবীতে এমন কেহ নাই, যাহার যশ নাই। যে পাকা জুয়াচোর, তাহারও বুদ্ধি সম্বন্ধে যশ আছে। আমি একজন কশাইয়েরও যশ শুনিয়াছি-মাংস সম্বন্ধে সে কাহাকেও প্রবঞ্চনা করিত না । সে কখন মেঘমাংস বলিয়া কাহাকেও কুকুরমাংস দেয় নাই । যশ সকলেরই আছে। আবার কাহারও যশ সম্পূর্ণ নহে। বেকনের ঘুষখোর অপবাদ– সক্রেতিস অপযশহেতু বধদণ্ডার্হ হইয়াছিলেন। যুধিষ্ঠির ক্রোণবধে মিথ্যাবাদী—অর্জুন বক্রবাহন কর্তৃক পরাভূত। কাইসরকে যে বিথনিয়ার রাণী বলিত, সে কথা অদ্যাপি প্রচলিত ;–সেক্ষপীয়রকে বলটের ভাড় বলিয়াছেন। যশ চাহি না। যশ সাধারণ লোকের মুখে । সাধারণ লোক কোন বিষয়েরই বিচারক নহে—কেন ন, সাধারণ লোক মুখ এবং স্থূলবুদ্ধি। মূখ স্থূলবুদ্ধির কাছে যশস্বী হইয়া আমার কি মুখ হইবে ? আমি যশ চাহি না । মান ? সংসারে এমন লোক কে আছে যে, সে মানিলে সুখী হই । যে দুই চারি জন আছে, তাহাদিগের কাছে আমার মান আছে। অন্তের কাছে মান-অপমান মাত্র । রাজদরবারে মান—সে কেবল দাসত্বের প্রাধান্ত চিহ্ন বলিয়া আমি অগ্রাহ করি । আমি মান চাহি না । মান চাহি কেবল আপনার কাছে।
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।