©8 द्वचनौ দেখ, এই পৃথিবীতে কত কোটি ময়ূন্য আছে, তাহ কেহ গণিয়া সংখ্যা করে নাই। বহু কোটি মনুষ্য সন্দেহ নাই। উহার এক একটি মনুষ্য অসংখ্য গুণের আধার। সকলেই ভক্তি, প্রতি, দয়া, ধৰ্ম্মাদির আধার—সকলেই পূজা, সকলেই অনুসরণীয়। আমার কাম্য কি কেহ নাই ? আমি কি ? আমার এক বাঞ্ছনীয় পদার্থ ছিল—আজিও আছে। কিন্তু সে বাসন পূর্ণ হইবার নছে। পুর্ণ হইবার নহে বলিয় তাহা হৃদয় হইতে অনেক দিন হইল উন্মুলিত করিয়াছি। আর পুনরুজ্জীবিত করিতে চাহি না। অন্য কোন বাঞ্ছনীয় কি সংসারে নাই ? তাই খুজি। কি করিব ? - কয় বৎসর হইতে আমি আপন আপনি এই প্রশ্ন করিতেছিলাম, উত্তর দিতে পারিতেছিলাম না। যে স্থই একজন বন্ধু বান্ধব আছেন, তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলে বলিতেন, তোমার আপনার কাজ না থাকে, পরের কাজ কর । লোকের যথাসাপা উপকার কর। সে ত প্রাচীন কথা। লোকের উপকার কিসে হয় ? রামের মার ছেলের জ্বর হইয়াছৈ, লাড়ী টিপিয়া একটু কুইনাইন দাও। রঘে পাগলের গাত্রবস্ত্র নাই, কম্বল কিনিয়া দাও। সস্তার মা বিধবা, মাসিক দাও। সুন্দর নাপিতের ছেলে ইস্কুলে পড়িতে পায় না— তাহার বেতনের আনুকূল্য কর। এই কি পরের উপকার । মানিলাম, এই পরের উপকার। কিন্তু এ সকলে কতক্ষণ যায় ? কতটুকু সময় কাটে ! কতটুকু পরিশ্রম হয় ? মানসিক শক্তিসকল কতখানি উত্তেজিত হয় ? আমি এমত বলি না যে, এই সকল কাৰ্য্য আমার যথাসাধ্য আমি করিয়া থাকি ; কিন্তু যতটুকু করি, তাহাতে আমার বোধ হয় না যে, ইহাতে আমার অভাব পূরণ হইবে। আমার যোগ্য কাজ আমি খুজি, যাহাতে আমার মন মজিবে, তাই খুজি । আর একপ্রকারে লোকের উপকারের ঢং উঠিয়াছে। তাহার এক কথায় নাম দিতে হইলে বলিতে হয় “বকাবকি লেখালেখি ” সোসাইটি, ক্লব, এসোসিয়েসন, সভা, সমাজ, বক্তৃত, রিজলিউশুন, আবেদন, নিবেদন, সমবেদন-আমি তাহাতে নহি। আমি একদা কোন বন্ধুকে একটি মহাসভার ঐরুপ একখানি আবেদন পড়িতে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম যে, কি পড়িতেছ ? তিনি বলিলেন, “এমন কিছু না, কেবল কাণ ফকির ভিক মাঙ্গে ।” এ সকল আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে তাই--কেবল “কাণা ফকির ভিক মাঙ্গে রে বাবা।” - এই রোগের আর এক প্রকার বিকার আছে। বিধবার বিবাহ দাও, কুলীন ব্রাহ্মণের বিবাহ বন্ধ কর, অল্প বয়সে বিবাহ বন্ধ কর, জাতি উঠাষ্টয়া দেও, স্ত্রীলোকগণ এক্ষণে গোরুর
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।