; রজনী কিছু দিন পরে হীরালাল দেখা দিল। আমি তাহাকে বলিলাম, “তুমি রজনীর সম্বাদ জান ?” সে বলিল—“না।” কি করিব। নালিশ, ফরিয়াদ হইতে পারে না। আমার জ্যেষ্ঠকে বলিলাম। জ্যেষ্ঠ বলিলেন, “রাস্কালকে মার " কিন্তু মারিয়া কি হইবে ? আমি সম্বাদপত্রে বিজ্ঞাপন , দিতে আরম্ভ করিলাম। যে রজনীর সন্ধান দিবে, তাহাকে অর্থ পুরস্কার দিব, ঘোষণা । করিলাম। কিছু ফল ফলিল না। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ রজনী জন্মান্ধ, কিন্তু তাহার চক্ষু দেখিলে অন্ধ বলিয়া বোধ হয় না । চক্ষে দেখিতে । কোন দোষ নাই। চক্ষু বৃহৎ, সুনীল, ভ্রমর কৃষ্ণতারাবিশিষ্ট । অতি সুন্দর চক্ষুঃ–কিন্তু কটাক্ষ নাই। চাক্ষুষ স্বায়ুর দোষে অন্ধ। স্বায়ুর নিশ্চেষ্টতাবশতঃ রেটিনাস্থিত প্রতিবিম্ব মস্তিষ্কে গৃহীত হয় না। রজনী সৰ্ব্বাঙ্গমুন্দরী ; বর্ণ উদ্ভেদ-প্রমুখ নিতান্ত নবীন কদলীপত্রের স্বায় গেীর, গঠন বর্ষাজলপুর্ণ তরঙ্গিণীর ন্যায় সম্পূর্ণতাপ্রাপ্ত ; মুখকান্তি গম্ভীর; গতি, অঙ্গভঙ্গী সকল মৃদ্ধ, স্থির, এবং অন্ধতাবশতঃ সৰ্ব্বদা সঙ্কোচঞ্জাপক ; হাস্য চুঃখময়। সচরাচর এই স্থিরপ্রকৃতি মুন্দর শরীরে সেই কটাক্ষহীন দৃষ্টি দেখিয়া কোন ভাস্কৰ্য্যপটু শিল্পকরের যুনির্মিত প্রস্তরময়ী স্ত্রীমূৰ্ত্তি বলিয়া বোধ হইত। রজনীকে প্রথম দেখিয়াই আমার বিশ্বাস হইয়াছিল যে, এই সৌন্দৰ্য্য অনিন্দনীয় হইলেও মুগ্ধকর নহে। রজনী রূপবতী, কিন্তু তাহার রূপ দেখিয়া কেহ কখন পাগল হইবে না। তাহার চক্ষের সে মোহিনী গতি নাই। সৌন্দৰ্য্য দেখিয়া লোকে প্রশংসা করিবে ; বোধ হয়, সে মূৰ্ত্তি সহজে ভুলিবেও না; কেন না, সে স্থির, গম্ভীর কান্তির একটু অদ্ভূত আকর্ষণী শক্তি অাছে। কিন্তু সেই আকর্ষণ অন্তবিধ , ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে তাহার কোন সম্বন্ধ নাই। যাহাকে “পঞ্চবাণ” বলে, রজনীর রূপের সঙ্গে তাহার কোন সম্বন্ধ নাই। নাই কি t সে যাহাই হউক—আমি মধ্যে মধ্যে চিন্তা করিতাম—রজনীর দশা কি হইবে ? সে ইতর লোকের কস্তা, কিন্তু তাহাকে দেখিয়াই বোধ হয় যে, সে ইতরপ্রকৃতিবিশিষ্ট নহে। ইতর লোক ভিন্ন, তাহার অন্যত্র বিবাহের সম্ভাবনা নাই। ইতর লোকের সঙ্গেও এত কালে বিবাহ ঘটে নাই। দরিদ্রের ভাৰ্য্যা গৃহকৰ্ম্মের জন্ত, যে ভাৰ্য্যার অন্ধতানিবন্ধন গৃহকর্মের সাহায্য হইবে ন—তাহাকে কোন দরিদ্র বিবাহ করিবে ? কিন্তু ইতর লোক ভিন্ন এই
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।