তৃতীয় খণ্ড : তৃতীয় পরিচ্ছেদ ĝå সেক্ষপিয়র গেলেরির পাতা উল্টান শেষ হইলে অমরনাথ নিজ প্রয়োজনের কথা কিছু না বলিয়া, ঐ পুস্তকস্থিত চিত্ৰ সকলের সমালোচনা আরম্ভ করিলেন। আমাকে বুঝাইয়৷ দিলেন যে, যাহা বাক্য এবং কাৰ্য্যদ্বারা চিত্রিত হইয়াছে, তাহা চিত্রফলকে চিত্রিত করিতে চেষ্টা পাওয়া ধৃষ্টতার কাজ। সে চিত্র কখনই সম্পূর্ণ হইতে পারে না ; এবং এ সকল চিত্রও সম্পূর্ণ নহে। ডেস্ডিমনার চিত্র দেখাইয়া কহিলেন, আপনি এই চিত্রে ধৈর্য্য, মাধুৰ্য্য, নম্রতা পাইতেছেন, কিন্তু ধৈৰ্য্যের সহিত সে সাহস কৈ ? নম্রতার সঙ্গে সে সতীত্বের অহঙ্কার কই ? জুলিয়েটের মূৰ্ত্তি দেখাইয়া কহিলেন, এ নবযুবতীর মূৰ্ত্তি বটে, কিন্তু ইহাতে জুলিয়েটের নবযৌবনের অদমনীয় চাঞ্চল্য কই ? অমরনাথ এইরূপে কত বলিতে লাগিলেন। সেক্ষপিয়রের নায়িকাগণ হইতে শকুন্তল, সীতা, কাদম্বরী, বাসবদত্ত, রুক্মিণী, সত্যভামা প্রভৃতি আসিয়া পড়িল । অমরনাথ একে একে র্তাহাদিগের চরিত্রের বিশ্লেষ করিলেন। প্রাচীন সাহিত্যের কথায় ক্রমে প্রাচীন ইতিহাসের কথা আসিয়া পড়িল, তৎপ্রসঙ্গে তাসিতস, গ্লুটার্ক, থুকিদিদিস প্রভৃতির অপূৰ্ব্ব সমালোচনার অবতারণা হইল। প্রাচীন ইতিবৃত্ত-লেখকদিগের মত লইয়া অমরনাথ কোমৃতের ত্রৈকালিক উন্নতিসম্বন্ধীয় মতের সমর্থন করিলেন। কোংহইতে র্তাহার সমালো মিল ও হকস্থলীর কথা আসিল। হকস্থলী হইতে ওয়েন ও ডারুইন, ডারইন হইতে কনেয়র সোপেনহয়র প্রভৃতির সমালোচনা আসিল। অমরনাথ অপুৰ্ব্ব পাণ্ডিত্যস্রোত, আমার কর্ণরন্ধে প্রেরণকরিতে লাগিলেন। আমি মুগ্ধ হইয়া আসল কথা ভুলিয়া গেলাম। বেলা গেল দেখিয়া, অমরনাথ বলিলেন, “মহাশয়কে শার বিরক্ত করিব না। যে জন্য আসিয়াছিলাম, তাহা এখনও বলা হয় নাই। রাজচন্দ্র স যে আপনাদিগকে ফুল বেচিত, তাহার একটি কন্যা আছে ?” আমি বলিলাম, “আছে বোধ হয়।” অমরনাথ ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, “বোধ হয় নয়, সে আছে। আমি তাহাকে বিবাহ করিব স্থির করিয়াছি।” আমি অবাক হইলাম। অমরনাথ বলিতে লাগিলেন, “আমি রাজচন্দ্রের নিকটে এই কথা বলিতেই গিয়াছিলাম। তাহাকে বলা হইয়াছে। এক্ষণে আপনাদিগের সঙ্গে একটা কথা আছে। যে কথা বলিব, তাহা মহাশয়ের পিতার কাছে বলাই আমার উচিত ; কেন না, তিনি কর্তা। কিন্তু আমি যাহা বলিব, তাহাতে আপনাদিগের রাগ করিবার কথা । আপনি সৰ্ব্বাপেক্ষ স্থিরস্বভাব এবং ধৰ্ম্মজ্ঞ, এজন্য আপনাকেই বলিতেছি।”
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।