তৃতীয় খণ্ড : চতুর্থ পরিচ্ছেদ §3. আমি। ত হৌক, কিন্তু হরেকৃষ্ণেরও ত এক্ষণে কেহ নাই ? বিষ্ণু। পূৰ্ব্বে তাহাই মনে করিয়া আপনাদিগকে বিষয় ছাড়িয়া দিয়াছিলাম। কিন্তু এক্ষণে জানিতেছি যে, তাহার এক কষ্ঠা আছে। আমি। তবে এত দিন সে কন্যার কোন প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয় নাই কেন ? বিষ্ণু। হরেকৃষ্ণের স্ত্রী তাহার পূর্বে মরে ; স্ত্রীর মৃত্যুর পরে শিশু কন্যাকে পালন করিতে অক্ষম হইয়া হরেকৃষ্ণ কন্যাটিকে তাহার শুালীকে দান করে। তাহার শুালী ঐ কন্যাটিকে আত্মকন্যাবৎ প্রতিপালন করে, এবং আপনার বলিয়া পরিচয় দেয়। হরেকৃষ্ণের মৃত্যুর পর তাহার সম্পত্তি লাওয়ারেশ বলিয়া মাজিষ্ট্রেট্ সাহেবকর্তৃক গৃহীত হওয়ার প্রমাণ পাইয়া, আমি হরেকৃষ্ণকে লাওয়ারেশ মনে করিয়াছিলাম। কিন্তু এক্ষণে হরেকৃষ্ণের একজন প্রতিবাসী আমার নিকট উপস্থিত হইয়া, তাহার কন্যার কথা প্রকাশ করিয়াছে। আমি তাহার প্রদত্ত সন্ধানের অনুসরণ করিয়া জানিয়াছি যে, তাহার কস্তা আছে বটে। আমি বলিলাম, “যে হয় একটা মেয়ে ধরিয়া হরেকৃষ্ণ দাসের কন্যা বলিয়৷ ধূৰ্ত্ত লোক উপস্থিত করিতে পারে। কিন্তু সে যে যথার্থ হরেকৃষ্ণ দাসের কন্যা, তাহার কিছু প্রমাণ আছে কি ?” “আছে।” বলিয়া বিষ্ণুরাম বাবু আমাকে একটা কাগজ দেখিতে দিলেন, বলিলেন, “এ বিষয়ে যে যে প্রমাণ সংগৃহীত হইয়াছে, তাহা উহাতে ইয়াদ দাস্ত করিয়া রাখিয়াছি।” আমি ঐ কাগজ লইয়া পড়িতে লাগিলাম। তাহাতে পাইলাম যে, হরেকৃষ্ণ দাসের গুগলীপতি রাজচন্দ্র দাস ; এবং হরেকৃষ্ণের কন্যার নাম রজনী। প্রমাণ যাহা দেখিলাম, তাহা ভয়ানক বটে। আমরা এত দিন অন্ধ রজনীর ঘনে ধনী হইয়া তাহাকে দরিদ্র বলিয়া ঘৃণা করিতেছিলাম। - বিষ্ণুরাম একটি জোবানবন্দীর জীবেত নকল আমার হাতে দিয়া বলিলেন, “এক্ষণে দেখুন, এই জোবানবন্দী কাহার ” আমি পড়িয়া দেখিলাম যে, জোবানবন্দীর বক্তা হরেকৃষ্ণ দাস। মাজিষ্ট্রেটের সম্মুখে তিনি এক বালাচুরীর মোকদ্দমায় এই জোবানবন্দী দিতেছেন। জোবানবন্দীতে পিতার নাম ও বাসস্থান লেখা থাকে ; তাহাও পড়িয়া দেখিলাম। তাহা মনোহর দাসের পিতার নাম ও বাসস্থানের সঙ্গে মিলিল। বিষ্ণুরাম জিজ্ঞাসা করিলেন, “মনোহর দাসের ভাই হরেকৃষ্ণের এই জোবানবন্দী বলিয়া আপনার বোধ হইতেছে কি না ?” আমি । বোধ হইতেছে।
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।