পাতা:রামচন্দ্রের বক্তৃতাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).pdf/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ ૭૯૪ ] ব্ৰহ্মাণ্ডের স্বাতন্ত্র্য থাকে না, নিত্য লীলা একাকার হইয়া যায়। সাকার রূপের মহাপ্রলয় হয়, এমন কি, উপাস্ত উপাসকের সম্বন্ধ পর্য্যস্ত বিলুপ্ত হইয়া আইসে । এইরূপ অদ্বৈতবাদী আপনাকে ব্ৰহ্ম বলিয়া পরিচয় দেন এবং তাহাই সকলের পরিণাম, এই মৰ্ম্মে ঘোষণাপত্র প্রচার করিয়া বিশ্বজনীন ধৰ্ম্মের উপসংহার করেন । যদ্যপি এই অদ্বৈতজ্ঞানকে বিশ্বজনীন ধৰ্ম্ম বলিয়া স্বীকার করা যায়, তাহা হইলে সৰ্ব্বত্র সমতা স্থাপিত না হইয়। বরং মহাপ্রলয় উপস্থিত হইবার কথা। এই ভাবকে মহাপ্রলয় ব্যতীত অন্য শব্দে উল্লেখ করা যায় না । মহাপ্রলয়ে স্থল জগৎ একাকার হইয়া যায়, বিশ্ব জগতের বিবিধ নয়নানন্দ প্রদ বস্তু সকল আকারবিহীন হইয়া অবস্থান্তর লাভ করে, এই নিমিত্ত উহাকে মহাপ্রলয় কহা যায়। অদ্বৈত জ্ঞানে বরং তাহা অপেক্ষা দূরতম স্থানে গমন করিতে হয়, সুতরাং মহাপ্রলয় শব্দের দ্বারা স্থল ব্ৰহ্মাণ্ডের চর্ণবিচূর্ণত ভাবের পরিচয় দিয়া থাকে। যদ্যপি অদ্বৈত জ্ঞানকেই বিশ্বজনীন ধৰ্ম্ম, সত্যধৰ্ম্ম, নিত্যধৰ্ম্ম, প্রতোকের অব দ্য প্রতিপাল্যধৰ্ম্ম বলা হয়, তাহা হইলে হিন্দুধৰ্ম্মান্তর্গত পৌর ণিক এবং তান্ত্রিক ভাব আর ধৰ্ম্ম বলিয়া স্থান পাইতে পারে না, একথ অদ্বৈতবাদীরা মুক্তকণ্ঠে প্রচার করিয়া থাকেন। অতএব পুরাণ এবং তন্ত্রকল্পিত গ্রন্থ মনুষ্যদিগকে নিরয়কুণ্ডে নিক্ষেপ করিবার পন্থাবিশেষ বলিয়। অবশ্য মানিয়া লইতে হইবে । কিন্তু রামকৃষ্ণদেবের অভিপ্রায়ে তাহা কখনও স্বীকার করা যায় না। তিনি বলিতেন যে, বেদ, পুরাণ, তন্ত্র প্রভৃতি হিন্দুদিগের এবং অন্যান্য সমুদয় জাতির ধৰ্ম্মশাস্ত্ৰও সত্য । সুতরাং, কেবল অদ্বৈতজ্ঞানকে বিশ্বজনীন ধৰ্ম্ম বলা যায় না ।