পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

এইরূপ ছিল, প্রথমে দুইজন তেলুগু ব্রাহ্মণ বেদপাঠ করিতেন। তৎপরে উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশ উপনিষৎ পাঠ করিতেন। পরে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ উপদেশ প্রদান করিলে সংগীতানন্তর সভা ভঙ্গ হইত। তারাচাঁদ চক্রবর্ত্তী এই প্রথম সমাজের সম্পাদক ছিলেন।
 ব্রহ্মসভা স্থাপিত হইলে কলিকাতার হিন্দুসমাজ মধ্যে আন্দোলন উঠিল। তাঁহাদের অনেকে রামমোহন রায়ের সভার কার্য্যপ্রণালী পরিদর্শনের জন্য সভাতে উপস্থিত হইতে লাগিলেন। রামমোহন রায় যে কেবল ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করিলেন তাহা নহে, সামাজিক বিষয়ে তাঁহার আচার ব্যব্যহার হিন্দুসমাজের লোকের নিতান্ত অপ্রিয় হইয়া উঠিল। এই সকল বিষয় লইয়া পথে ঘাটে, বাবুদের বৈঠকখানায়, রামমোহন রায়ের দলের প্রতি সর্ব্বদা কটুক্তি বর্ষণ হইত।
 যখন একদিকে এই সকল বাগবিতণ্ডা ও আন্দোলন চলিতেছে তখন হিন্দুকলেজের মধ্যে ঘোর সামাজিক বিপ্লবের সূচনা দৃষ্ট হইল। ডিরোজিও হিন্দুকলেজে পদার্পণ করিয়াই, চুম্বকে যেমন লৌহকে টানে, সেইরূপ কলেজের প্রথম চারিশ্রেণীর বালককে কিরূপ আকৃষ্ট করিয়া লইলেন তাহা অগ্রেই বলিয়াছি। এরূপ অদ্ভূত-দাকর্ষণ, শিক্ষক ছাত্রে এরূপ সম্বন্ধ, কেহ কখনও দেখে নাই। ডিরোজিও তিন বৎসর মাত্র হিন্দুকালেজে ছিলেন, কিন্তু এই তিন বৎসরের মধ্যে তাঁহার শিষ্যদলের মনে এমন কিছু রোপণ করিয়া দিলেন যাহা তাহাদের অন্তরে আমরণ বিদ্যমান ছিল। তাঁহাদের অনেকেই উত্তর কালে এক এক বিভাগে প্রসিদ্ধ হইয়াছিলেন। কিন্তু যিনি যে বিভাগেই গিয়াছিলেন, কেহই ডিরোজিওর শিক্ষাকে পশ্চাতে ফেলিয়া যাইতে পারেন নাই। তাঁহার অপরাপর প্রধান প্রধান শিষ্যের পরিচয় পরে দিব, একজনের বিষয় সাধারণের জ্ঞাত নহে এই জন্য কিছু বলিতেছি।
 একবার বোম্বাই প্রদেশে-গিয়া তথাকার প্রার্থনাসমাজের সুযোগ্য ও সম্মানিত সভ্য পরকালগত নারায়ণ মহাদেব পরমানন্দ মহাশয়ের মুখে শুনিলাম যে তাঁহাদের যৌবনকালে বোম্বাই সহরে এক অদ্ভুত সন্ন্যাসী দেখা দিয়াছিলেন। তাঁহার অবলম্বিত নামটা এখন বিস্তৃত হইয়াছি। তিনি ইংরাজী ভাষাতে সুশিক্ষিত ছিলেন। সন্ন্যাসী বোম্বাই হইতে গুজরাটের অন্তবর্ত্তী কাটিওয়াড় প্রদেশে গমন করিলেন। কিছুদিন পরে বোম্বায়ের প্রসিদ্ধ কোনও সংবাদপত্রে Misgovernment at Kntiwad”—“কাটিওয়াড়ে অরাজকতা” নাম দিয়া পত্র সকল মুদ্রিত হইতে