পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

গ্রহণ করিয়া আদি ব্রাহ্মসমাজের সভ্যরূপে পরিগণিত হন। কেবল তাহা নহে, আপনার স্ত্রী পুত্র পরিবার সকলকে ঐ ধর্ম্মের আশ্রয়ে আনিবার জন্য ব্যগ্র হন; এবং ঈশ্বর প্রসাদে সে চেষ্টাতে কৃতকার্য্যও হইয়াছিলেন।

 ১৮৬৩ সালে রাজ কার্য্য হইতে অবসৃত হইয়া যখন স্বীয় বাসগ্রামে বাস করিলেন, তখন সেখানে একটা ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করিয়া ব্রাহ্মধর্ম্ম সাধন ও প্রচারে প্রবৃত্ত হইলেন। এই সমাজ অদ্যাপি বিদ্যমান রহিয়াছে। ১৮৬৬ সালে উন্নতিশীল ব্রাহ্মদল আদি ব্রাহ্মসমাজ হইতে বিছিন্ন হইলে, তিনি ঐ দলের সহিত হৃদয়ের যোগ স্থাপন করিয়াছিলেন; এবং তাঁহাদের অবলম্বিত পদ্ধতি অনুসারে আপনার পুত্রের বিবাহ দিয়াছিলেন। তৎপরে ১৮৭৮ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ যখন স্থাপিত হইল, তখন তিনি ইহার নেতৃবর্গের মধ্যে অগ্রগণ্য ব্যক্তি ছিলেন। বহুবৎসর ইহার সভাপতির কার্য্য করিয়াছিলেন। ইহার উন্নতি বিষয়ে তাঁহার অবিশ্রান্ত মনোযোগ ছিল। ব্রাহ্মপদ্ধতি অনুসারে পুত্রের বিবাহ দেওয়াতে তাঁহার আত্মীয় স্বজন ও তাঁহার স্বগ্রামবাসী বন্ধুগণ তাঁহাকে একঘরে করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহাতে তিনি একদিনের জন্যও দুঃখিত ছিলেন না, বা একদিনের জন্য গ্রামবাসীদিগের হিতেচ্ছা তাঁহার হৃদয়কে পরিত্যাগ করে নাই। তিনি সমভাবে সকলের কল্যাণ চিন্তা করিতেন এবং গ্রামের সর্ব্ববিধ উন্নতিতে সহায় হইবার চেষ্টা করিতেন।

 জীবনের অবসানকালে তিনি কলিকাতাতে বন্ধুবান্ধবের মধ্যে আসিয়া প্রতিষ্ঠিত হন। এইখানেই ১৮৯৭ সালের ১২ নবেম্বর বুধবার মানবলীলা সম্বরণ কয়েন।

 এরূপ সাধুপুরুষের অবসানকাল যেরূপ হয় শিবচন্দ্র দেবের অবসানকাল সেইরূপই হইয়াছিল। ভাটার জল যেমন অল্পে অল্পে নামিয়া যায়, তাঁহার জীবননদীর জল যেন তেমন অল্প অল্পে কমিয়া গেল। জীবনের সঙ্গনী সহধর্ম্মিণীর ক্রোড়ে মাথা রাখিয়া, পুত্র কন্যা দৌহিত্রগণে পরিবেষ্টিত হইয়া, বন্ধুবান্ধবের সহিত দেশহিতকর নানা বিষয়ে আলাপ করিতে করিতে শাস্তিতে শাস্তিধামে প্রস্থান করিলেন। তিনি আমাদের মধ্যে সদাশয়তা, মিতাচারিত পরহিতৈষণা, কর্ত্তব্যপরারগতা ও ধর্মভীরুতার আদর্শস্বরূপ ছিলেন। সত্য সত্যই ডিরোজিওবৃক্ষের এই ফলটী অতি মধুর হইয়াছিল।