পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।
১৪৫

রাধানাথ যে শ্রেণীতেই উন্নীত হইতেন সেই শ্রেণীতেই অগ্রগণ্য বালকদিগের মধ্যে স্থান প্রাপ্ত হইতেন। প্রথম শ্রেণীতে আসিয়াই রাধানাথ তৎকালের রীতি অনুসারে ষোল টাকা বৃত্তি পাইয়াছিলেন। সমুদয় শিক্ষণীয় বিষয়ের মধ্যে গণিতের প্রতি তাঁহার বিশেষ মনোযোগ ছিল। সে সময়ে ডাক্তার টাইট্‌লার (Dr. Tytler) নামে হিন্দু কালেজে একজন প্রসিদ্ধ শিক্ষক ছিলেন। এই ডাক্তার টাইট্‌লার সে সময়কার উৎকেন্দ্র ব্যক্তিদিগের মধ্যে একজন অগ্রগণ্য বলিয়া পরিগণিত ছিলেন। রামমোহন রায়ের গ্রন্থাবলীর মধ্যে ডাক্তার টাইট্‌লারের সহিত বিচার বলিয়া যে সকল বিচার দৃষ্ট হয় তাহা বোধ হয় ইহারই সঙ্গে ঘটিয়াছিল। ইহার বিষয়ে এইরূপ শোনা যায় যে ইনি সংস্কৃত ভাষা পাঠ করিতে ও শুনিতে বড় ভাল বাসিতেন। বালকেরা তাহা জানিত এবং যে বালক যে দিন পড়া প্রস্তুত করিয়া না আসিত সে সেদিন ডাক্তার টাইট্‌লারকে প্রবঞ্চনা করিবার এক উপায় বাহির করিত। তাঁহাকে শুনাইয়া কোনও সংস্কৃত উদ্ভট কবিতার এক চরণ আবৃত্তি করিত। অমনি ডাক্তার টাইট্‌লার তন্ময় হইয়া জিজ্ঞাসা করিতেন—“কি, কি, আবার বল, সমগ্র কবিতাটা বল” এইরূপে কবিতা শুনিতে ও তাহার অর্থ বুঝিতে সময়টা কাটিয়া যাইত, বালক নিষ্কৃতি লাভ করিত। সহরে এরূপ জনশ্রুতি আছে যে তিনি নাকি একবার নিজের পুত্রের ছাগলের গাড়ি চড়িয়া গড়ের মাঠে বাহির হইয়াছিলেন।

 ডাক্তার টাইটলার একজন পণ্ডিত লোক ছিলেন। গণিত বিদ্যায় তাঁহার মত সুপণ্ডিত লোক তখন কলিকাতাতে ছিল না। রাধানাথ টাইটলারের নিকটে গণিত বিদ্যাতে পারদর্শী হইয়াছিলেন। তাঁহার নিকটে নিউটন-প্রণীত সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘প্রিন্সিপিয়া' পড়িয়াছিলেন।

 ডিরোজিও যখন একাডেমিক এসোসিএশন স্থাপন করিলেন, তখন কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ প্রভৃতির ন্যায় রাধানাথও তাহাতে যোগ দিলেন; এবং ডিরোজিওর শিষ্যদলের মধ্যে একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তি হইয়া উঠিলেন। তাঁহার দেহে যে প্রকার বল, মনে সেইরূপ সাহস ছিল। তিনি বাক্যে যাহা বলিতেন কাজেও সেই প্রকার করিতেন; কাহাকেও ভয় বা কাহারও মুখাপেক্ষা করতেন না। তিনি যে স্বীয় হৃদয়স্থিত বিশ্বাসানুসারে সর্ব্বদা কার্য্য করিতেন, তাহার একটী প্রমাণ এই যে কেহই তাঁহাকে দেশীয় রীতি অনুসারে একটা অল্পবয়স্কা বালিকার পাণিগ্রহণ করিতে সম্মত করিতে

 ১৯