পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পরিচ্ছেদ।
১৪৯

রীড নামক এক ইংরাজের অধীনে দশ টাকা বেতনে কর্ম্ম করিতেন। যে কারণে ও যে ভাবে তিনি সে কর্ম্ম ছাড়িয়া রামতনু বাবুর আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহার বিবরণ বাবু বেচারাম চট্টোপাধ্যয় প্রণীত শ্যামাচরণ সরকারের জীবনবৃত্ত হইতে উদ্ধৃত করিয়া দিতেছি; —

 “পূর্ণিয়া নিবাসী মণিলাল খোট্টা নামক তাঁহার (সাহেবের) একজন খাজাঞ্জী ছিল। তাঁহার স্বভাবগত কোনও দোষ দৃষ্টে কার্য্যের প্রতি সন্দিহান হইয়া, সাহেব তাহাকে কর্ম্মচ্যুত করেন। মণিলাল তাহার প্রাপ্য বেতনাদি লইরা রীড সাহেবের নামে রাজদ্বারে অভিযোগ উপস্থিত করিলেন। রীড সাহেব স্বপক্ষ সমর্থন জন্য শ্যামাচরণ বাবুকে সাক্ষী মানিলে, কি জানি সাহেবের অনুরোধে পাছে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে হয়, এই ভয়ে তাহার তৎকালীন ১০ টাকা বেতনের দুর্লভ চাকরিটী ধর্ম্মের অনুরোধে অম্লানবদনে পরিত্যাগ করিয়া, তাহার পূর্ব পরিচিত বন্ধু এবং হিন্দুকালেজের সুবিখ্যাত ছাত্র রামতনু লাহিড়ী মহাশয়ের পটলডাঙ্গার বাসায় উপস্থিত হইলেন; এবং তাঁহাকে পুর্ব্ববৃত্তান্ত অবগত করাইলেন। ন্যায়পরায়ণ রামতনু বাবু তৎশ্রবণে আহ্লাদের সহিত তাঁহাকে নিজ প্রবাস গৃহে রাখিয়া সহোদর নির্ব্বিশেষে প্রতিপালন করিতে লাগিলেন।”

 “যখন তিনি রামতনু বাবুর নিকটে অবস্থান করেন, সেই সময়েই ভারতপ্রসিদ্ধ রামগোপাল ঘোষ মহাশয়ের সহিত তাঁহার আলাপ পরিচয় হয়। রামগোপাল বাবু যত্ন চেষ্টা করিয়া জোসেফ কোম্পানির আফিসের অধ্যক্ষ জোসেফ সাহেবকে হিন্দী পড়াইবার জন্য শ্যামাচরণ বাবুকে মাসিক ১০ টাকা বেতনে নিযুক্ত করিয়া দেন। তিনি তৎপরে ক্যাল্‌সেল সাহেবকে হিন্দী পড়াইবার জন্যও নিযুক্ত হন। সাহেবদিগকে হিন্দী পড়াইবার সময়েই তাঁহার বিশেষ হৃদয়ঙ্গম হইল যে কিছু ইংরাজী না জানিলে বিষয় কার্য্য লাভ করা দুষ্কর, তজ্জন্য যখন তাহার বয়ঃক্রম প্রায় ২২ বৎসর তখন তিনি রামতনু বাবুর নিকটে ইংরাজী ভাষার বর্ণমালা শিক্ষা করিতে আরম্ভ করিলেন।”

 পূর্ব্বোক্ত কয়েক পংক্তিতে আমরা লাহিড়ী মহাশয়ের সদাশয়তার কি সুন্দর দৃষ্টান্ত দেখিতে পাইতেছি। তিনি ৩০৲ টাকা বেতন হইতে নিজের ও ভ্রাতৃদ্বয়ের ব্যয় নির্ব্বাহ করিয়া এবং দেশে পিতামাতার পারিবারিক ব্যয়ের যথাসাধ্য সাহায্য করিয়াও নিরাশ্রয় ব্যক্তিদিগের জন্য দ্বার উন্মুক্ত রাখিতেন।