পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৮
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

উপস্থিত হইল, তাহার ফলস্বরূপ ১৮১৯ সালে বাপ্তিস্ত মিশন সোসাইটীর একজন সভ্য ভারতীয় নারীগণের দুর্দ্দশা ও শিক্ষার আবশ্যকতা প্রদর্শন করিয়া এক নিবেদন-পত্র বাহির করিলেন। সেই নিবেদন-পত্রের দ্বারা উত্তেজিত হইয়া Mr. Lawson and Pearce's Seminary নামক তৎকাল-প্রসিদ্ধ বিদ্যালয়ের মহিলাগণ একত্র হইয়া ভারতে স্ত্রীশিক্ষা প্রচলনের জন্য এক সভা স্থাপন করিলেন; তাহার নাম হইল—"Female Juvenile Society”। এই সভার মহিলা সভ্যগণ কলিকাতার নানাস্থানে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। রাধাকান্ত দেব ইহাদের উৎসাহ-দাতা হইলেন; এবং নিজে “স্ত্রীশিক্ষা বিধারক” নামে একখানি পুস্তিক রচনা করিয়া তাঁহাদের হস্তে অর্পণ করিলেন। এইরূপে কয়েক বৎসর কার্য্য চলিল। ১৮২১ সালে স্কুল সোসাইটীর কতিপয় মহিলা-সভ্যের প্ররোচনায় ইংলণ্ডের British and Foreign School Society-র সভ্যগণ কিছু অর্থ সংগ্রহ করিয়া কুমারী কুক (Miss Cooke) নাম্নী এক শিক্ষিতা মহিলাকে এদেশে প্রেরণ করিলেন। কুমারী কুক ১৮২১ সালে নবেম্বর মাসে এদেশে উপস্থিত হইলেন। কিন্তু তিনি আসিয়া দেখিলেন যে স্কুল সোসাইটীর সভ্যগণের মধ্যে মতভেদ উপস্থিত হওয়াতে উক্ত সভ্য তাহার ভরণ পোষণের ভার গ্রহণে অসমর্থ। এই বিপদে চার্চ মিশনারি সোসাইটীর সভ্যগণ অগ্রসর হইয়া কুমারী কুকের ভার গ্রহণ করিলেন। উক্ত মিশনের অধীন থাকিয়া তিনি উৎসাহের সহিত স্বীয় অবলম্বিত কার্য্য-সাধনে প্রবৃত্ত হইলেন।

 তিনি কার্য্যারম্ভ করিবার অগ্রে বাঙ্গালী ভাষা শিক্ষাতে মনোনিবেশ করিলেন। যখন মনোযোগ সহকারে বাঙ্গালী ভাষা শিক্ষা করিতেছেন, তখন একদিন শিশুদের বাঙ্গালা গুনিবার জন্য স্কুল সোসাইটীর স্থাপিত কোনও পাঠশালাতে গিয়া দেখেন একটী বালিকা পাঠশালার দ্বারে দাঁড়াইয়া কাঁদিতেছে, গুরুমহাশয় তাহাকে বালকদিগের সহিত পড়িতে দিবেন না। অনুসন্ধানে জানিলেন সে বালিকাটার ভ্রাতা ঐ পাঠশালে পড়ে, শিশু বালিকাটা স্বীয় ভ্রাতার সহিত পড়িবার জন্য গুরু মহাশয়কে মাসাধিক কাল বিরক্ত করিতেছে। কুমারী কুক সেই বালিকার মাতার ও পাড়ার অপরাপর মহিলাদিগের সহিত দেখা করিলেন। অনেক কথোপকথনের পর সেই পাড়াতে বালিকাবিদ্যালয় খোলা স্থির হইল। অল্পদিনের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ১০টা ৰিদ্যালয় স্থাপিত হইল এবং ন্যূনাধিক ২৭৭টা বালিকা শিক্ষা করিতে