পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩২
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

বোধ হয় পাঠকবর্গের বিরক্তিই তাঁহার প্রধান কারণ হইয়া থাকিবে। কারণ ঐ ১২৫৪ সালেই ঈশ্বরচন্দ্র “সাধুরঞ্জন” নামে একখানি সাপ্তাহিক পত্র প্রকাশ করিতে আরম্ভ করেন। এখানিতে তাঁহার শিষ্য-মণ্ডলীর কবিতা ও প্রবন্ধাদি প্রকাশিত হইত। এই পত্র বহুদিন জীবিত ছিল। ১২৬০ সাল হইতে ঈশ্বরচন্দ্র এক একখানি স্থূলকায় মাসিক প্রভাকর প্রকাশ করিতে আরম্ভ করেন। তিনি ১২৬২ সালের আষাঢ় মাসে রায় গুণাকর ভারতচন্দ্রের জীবনচরিত সম্বলিত গ্রন্থাবলী পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন। এই তাঁহার প্রথম পুস্তক প্রকাশ। ১২৬৪ সালে প্রবোধপ্রভাকর নামে আর একখানি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তিনি আর দুইটী কার্য্যে হস্তার্পণ করিয়াছিলেন, তাহা সম্পূর্ণ করিয়া যাইতে পারেন নাই। প্রথম, বঙ্গীয় কবিগণের জীবনচরিত ও কাব্যসংগ্রহ। দ্বিতীয়, শ্রীমদ্ভাগবতের বাঙ্গালা অনুবাদ। এই উভয় কার্য্যেই তিনি হস্তার্পণ করিয়াছিলেন এবং তজ্জন্য প্রভূত পরিশ্রমও করিয়াছিলেন, কিন্তু উভয় কার্য্য সম্পন্ন করিবার পূর্ব্বেই তাঁহার দেহান্ত হয়। ১২৬৫ সালের মাঘ মাসের মাসিক ‘প্রভাকর প্রকাশ করিবার পরই তিনি কঠিন জ্বররোগে আক্রান্ত হইয়া মৃত্যুশষায় শয়ন করেন, এবং সেই জ্বরেই ১১ই মাঘ দিবসে তাঁহার মৃত্যু হয়।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

 ঈশ্বরচন্দ্র যখন মৃত্যুশষ্যাতে শয়ান, তখন মধুসূদন লোকচক্ষের অগোচয়ে থাকিয়া প্রতিভা-বলে উঠিয়া দাঁড়াইবার জন্য দুরন্ত পরিশ্রম করিতেছিলেন। মধুসূদন যশোর জেলাস্থ সাগরদাঁড়ী নামক গ্রামবাসী রাজনারায়ণ দত্তের পুত্র। তাঁহার পিতা কলিকাতার সদর দেওয়ানী আদালতের একজন প্রসিদ্ধ উকীল ছিলেন; এবং তদুপলক্ষে কলিকাতায় উপনগরবর্ত্তী খিদিরপুর নামক স্থানে বাস করিতেন। ইংরাজী ১৮০৪ সালে, ১৫ জানুয়ারী তাঁহার জন্ম হয়। তাঁহার জননী জাহ্নবী দাসী কাটিপাড়ার জমিদার গৌরীচরণ ঘোষের কন্যা। জাহ্নবীর জীবদ্দশাতেই বিলাস-পরায়ণ রাজনারায়ণ আর তিনটী বিবাহ করিয়াছিলেন। দুইটী সহোদর ভ্রাতার অকালে মৃত্যু হওরায় মধুসূদন স্বীয় জননীর একমাত্র পুত্র ছিলেন। সুতরাং তিনি শৈশববধি মায়ের অঞ্চলের নিধি, আদুরে ছেলে ছিলেন। রাজনারায়ণেয় অর্থের অভাব ছিল না; সুতরাং অর্থের দ্বারা সস্তানকে যতদূর আদর দেওয়া যায়,