পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
একাদশ পরিচ্ছেদ।
২৭৭

উঠিয়া গেল বটে, কিন্তু ইহা হইতে পরোক্ষভাবে ব্ৰহ্মমন্দিরের উপাসকমণ্ডলীর সভ্যগণের মধ্যে আর এক আন্দোলন উঠিল। উপাসকমণ্ডলীর কার্য্যে উপসকগণের অধিকার স্থাপনের চেষ্ট আরম্ভ হইল এবং কেশবচন্দ্রের অবলম্বিত কতকগুলি মত লইয়া বিশেষ আলোচনা চলিল। এই বিরোধিদল “সমদৰ্শী” নামে এক মাসিকপত্র বাহির করিলেন; এবং প্রকাগু বক্তৃতাদি করিতে প্রবৃত্ত হইলেন।

 ওদিকে কেশবচন্দ্র ৰ্তাহার অনুগত সাধকদলকে যোগী, ভক্ত প্রভৃতি। কয়েক শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়া বিশেষ উপদেশ দিতে প্রবৃত্ত হইলেন; এবং কলিকাতার অনতিদূরে একটা উদ্যান-বাটিকা ক্রয় করিয়া, তাহার “সাধনকানন’ নাম রাথিয়া, মধ্যে মধ্যে সেখানে গিয়া প্রচারকদলের সহিউ বাস করিতে লাগিলেন। এই সময়ে তিনি বিশেষভাবে বৈরাগ্যের উপদেশ দিতে প্রবৃত্ত হন; এবং তাহার নিদর্শন স্বরূপ নিজে স্বপাকে আহার করিতে আরম্ভ করেন। তাহার অনুকরণে তাহার প্রচারকগণের অনেকেও স্বপাকে আহার করিতে থাকেন। ইহা লইয়াও ব্রাহ্মদিগের মধ্যে মতভেদ ও বাদানুবাদ আরম্ভ হর।

 ১৮৭৭ সালের প্রারম্ভে সমাজের কার্য্যে নিয়মত্তস্ত্র প্রণালী স্থাপনের উদ্দেশে “সমদৰ্শী দল একটা ব্ৰহ্মপ্রতিনিধি সভা গঠনের জন্ত ব্যগ্র হন। কেশবচন্দ্র, তাহাদের চেষ্টাতে বাধা দেন নাই; বরং সাহায্য করিতে সন্মত হইরাছিলেন। কিন্তু এই চেষ্টা সম্পূর্ণ কার্য্যে পরিণত হইতে না হইতে কুচবিহারের বিবাহ আসিয়া পড়িল; এবং ঐ বিবাহে ব্ৰাহ্মদের অবলম্বিত কতকগুলি নিয়ম লঙ্ঘন হওয়াতে উন্নতিশীল ব্রাহ্মদল তাঙ্গিয়া দুই ভাগ হইয়া যায়। g বিবাহন্থে কেশববাবুকে আচার্যের পদ হইতে ও ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদকের পদ হইতে অবস্থত করিবার জন্য চেঃ আরম্ভ হইল। কেশববাবু তাহা হইতে দিলেন না; স্বতরাং ব্রাহ্মদিগের অধিকাংশ তাহাকে পরিত্যাগ করিয়া “সাধারণ ব্ৰাহ্মসমাজ” নামে একটা স্বতন্ত্র সমাজ স্থাপন করিলেন।

 ইহার কিছুদিন পরে কেশবচন্দ্র, তাহাব নিজের বিভাগীর সমাজের “নববিধান” নাম দিয়া, তাহার নূতন বিধি, নুতন সাধন, নূতন লক্ষণ, নুতন প্রণালী প্রভৃতি স্বষ্টি করিত্বে প্রবৃত্ত হইলেন; মহম্মদের অমুকরণে বিরোধিগণকে কাফের শ্রেণী গণ্য করিয়া তাহাদের প্রতি কটুক্তি বর্ষণ করিতে লাগিলেন; এবং আপনার দলের শ্রেষ্ঠতা প্রতিপাদনের জন্ত বিধিমতে প্রশ্বাসী হইলেন।