পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
একাদশ পরিচ্ছেদ।
২৮৩

লিখিয়া কাব্যরচনার অভ্যাস আরম্ভ করেন। তখন প্রভাকরে উত্তর প্রত্যুত্তরে কবিতা লেখা যুবক লেখকদিগের একটা মহা উৎসাহের ব্যাপার ছিল। এই সকল বাকৃযুদ্ধ “কালেজীয় কবিতাযুদ্ধ” নামে প্রথিত হইয়াছে * এরূপ শোনা যায় বঙ্কিমচন্দ্র যৌবনের প্রারম্ভে “ললিতা-মানস” নামে একখানি পদ্যগ্রন্থ প্রচার করিয়াছিলেন।

 তিনি হুগলী-কালেজ হইতে কলিকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গমন করেন; এবং সেখান হইতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত বি, এ, উপাধি সৰ্ব্বপ্রথমে প্রাপ্তহইয়া ডেপুটী মাজিষ্ট্রেট কৰ্ম্ম প্রাপ্ত হন।

 ১৮৬৪ সালে তাহার প্রণীত “দুর্গেশনন্দিনী” নামক উপন্যাস মুদ্রিত ও প্রচারিত হয়। আমরা সে দিনের কথা ভুলিব না। দুর্গেশ-নন্দিনী বঙ্গসমাজে পদার্পণ করিবামাত্র সকলের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করিল। এ জাতীয় উপন্যাস বাঙ্গালাতে কেহ অগ্রে দেখে নাই। আমরা তৎপূৰ্ব্বে “বিজয় বসন্ত” “কামিনী কুমার” প্রভৃতি কতিপয় সেকেলে কাদম্বরী ধরণের উপন্যাস, গার্হস্থ্য পুস্তক প্রচার সভার প্রকাশিত, “হ’সরূপী রাজপুত্র”, “চকুমকির বাক্স” প্রভৃতি কয়েকটা ছোট গল্প, এবং “আরব উপদ্যাস” প্রভৃতি কয়েকখানি উপকথা গ্রন্থ আগ্রহের সহিত পড়িয়া আসিতেছিলাম। “আলালের ঘরের দুলাল” তাহার মধ্যে একটু নুতন ভাব আনিয়াছিল। কিন্তু দুর্গেশনন্দিনীতে আমরা যাহা দেখিলাম তাহা অগ্রে কখনও দেখি নাই। এরূপ অদ্ভূত চিত্রণ শক্তি বাঙ্গালাতে কেহ অগ্রে দেখে নাই। দেখিয় সকলে চমকিয়া উঠিল। কি বর্ণনার রীতি, কি ভাষার নবীনত, সকল বিষয়ে বোধ হইল, যেন বঙ্কিমবাবু দেশের লোকের রুচি ও প্রবৃত্তির স্রোত পরিবর্তিত করিবার জন্ত প্রতিজ্ঞাঢ়ি হইয়া লেখনী ধারণ করিয়াছেন।

 অল্পদিন পরে “কপালকুণ্ডলা” দেখা দিল। যে তুলিকা দুর্গেশনন্দিনীয় নয়নানন্দকন্তু কমনীয়তা চিত্রিত করিয়াছিল, তাঃ কপালকুণ্ডলার গাম্ভীৰ্য্যরস-পূর্ণ ভাব স্বষ্টি করিল! লোকে বিস্ময়াবিষ্ট হইয়া যাইতে লাগিল।

 ক্রমে মৃণালিনী, চন্দ্রশেখর, বিষবৃক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল, আনন্দমঠ, দেবীচৌধুরাণী, কমলাকান্তের দপ্তর, সীতারাম, রাজসিংহ প্রভৃতি আরও অনেকগুলি উপন্যান্স প্রকাশিত হইয়া বঙ্কিমচন্দ্রকে বঙ্গীয় ঔপন্যাসিকদিগের শীর্ষস্থানে স্থাপন করিল।

 বঙ্কিমবাবু স্বপ্রণীত গ্রন্থ সকলে এক নুতন বাঙ্গালা গদ্য লিখিার পদ্ধতি