পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩১৮
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ

 ১৮৪৮ হইতে ১৮৫• এই কালের মধ্যে ব্রাহ্মসমাজের অবলম্বিত ধৰ্ম্ম বিশ্বাসে একটা মুমহং পরিবর্তন ঘটে, তাহাতে রাজনারায়ণ বাবুর একটু হাত ছিল বলিয়া তাহার উল্লেখ করা যাইতেছে —সে পরিবর্তনটী এই। তৎপূৰ্ব্বে ব্রাহ্মসমাজের সভ্যগণ বেদকে আপনাদের ধৰ্ম্মবিশ্বাসের অভ্রান্ত ভিত্তি বলিয়া প্রচার করিয়া আসিতেছিলেন। রাজনারায়ণ বাবুও সেইরূপ বিশ্বাস করিতেন; এবং প্রচার করিতেন। কিন্তু ডাক্তার ডফ প্রভৃতি খ্ৰীষ্টীয় প্রচারকগণের সহিত এই বিষয়ে বিচার উপস্থিত হইয়া তাহার ফল স্বরূপ ব্রাহ্মসমাজ মধ্যেও বিচার উপস্থিত হইল। কাশী হইতে চারিজন বেদজ্ঞ ছাত্র ফিরিয়া আসিলে এই বিচার আরও পাকিয়া উঠিল। রাজনারায়ণ বাবু যখন বেদে অভ্রান্ততাবাদ রক্ষা করা কঠিন বলিয়া অনুভব করিলেন, তখন অক্ষয়কুমার দত্ত মহাশয়ের সঙ্গে মিলিত হইয়া দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহিত বিচার উপস্থিত করিলেন। তাহার ফল স্বরূপ বেদের অভ্রান্ততাবাদ ব্রাহ্মসমাজের অবলম্বিত মত হইতে পরিত্যক্ত হইল; এবং মানবেয় ধৰ্ম্ম বিশ্বাসের ভিত্তি আত্ম-প্রত্যয়ের উপরে নিহিত হইল।

 ১৮৫১ সালের ফেব্ররারি মাসে তিনি মেদিনীপুর জেলা স্কুলের হেড মাষ্টার হইয়া যান। সেখানে তিনি ১৮৬৬ সালের মার্চ মাস পর্য্যন্ত ছিলেন। মেদিনীপুরে গিয়া ত্বাহার কার্যাশক্তি অদ্ভূত রূপে বিকাশ পাইল। তিনি দেশহিতকর নানা কার্য্যে ব্যাপৃত হইয়া পড়িলেন। সভার পর সভা এইরূপে এত প্রকার সভা সমিতি করিতে লাগিলেন, যে একবার সেখানকার একজন ভদ্রলোক র্তাহাকে বলিয়াছিলেন যে—আপনার সভার জালাতে আমরা অস্থির; এইবার সভানিবারিণী সভা নামে একটা সভা স্থাপন না করিলে আর চলিতেছে না। ঐ সভায় সভ্যদিগের প্রধান কাজ হুইবে, আপনাদের কোনও সভার সংবাদ পাইলেই লাঠি সোটা লইয়া উপস্থিত হওয়া।

 মেদিনীপুরে অবস্থান কালে রাজনারায়ণ বাবু প্রধানতঃ সাত প্রকার কার্য্যে হাত দিয়াছিলেন।

 (১ম) মেদিনীপুর জেলা স্কুলের উন্নতি সাধন।
 (২য়) মেদিনীপুর ব্রাহ্মসমাজের পুনঃ স্থাপন।
 (৩য়) জাতীয়-গৌরব-সম্পাদনী সভা স্থাপন।
 (৪) সুরাপান নিবারিণী সভা স্থাপন ' '
 (৫ম) বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন।
 (৬) ধৰ্ম্মতত্ত্ব দীপিকা গ্রন্থ প্রণয়ন।