পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ।
৩৪৩

তিনি ঢাকার বন্ধুগণের সাহায্য হারাইলেন; কিন্তু কলিকাতাতে হঠাৎ সেরূপ সাহায্য পাইলেন না। অবলাবান্ধব সংক্রান্ত সমুদয় কাৰ্য্য তাহার একার স্কন্ধে পড়িয়া গেল। প্রবন্ধ লেখা, প্রাফ দেখা, লেবেল লেখা, বণ্টন করা প্রভৃতি প্রায় সকল কাৰ্য্যই একা • করিতে লাগিলেন। কিন্তু তাহাতেও পশ্চাৎপদ হইলেন না। আহলাদিতচিত্তে সমুদয় সহ করিতে লাগিলেন।

 ক্রমে তাঁহাকে বেষ্টন করিয়া ব্ৰাহ্মসমাজের মধ্যেই এক অবলাবান্ধব নারীহিতৈষী দল দেখা দিল। ব্রাহ্মসমাজের অপরাপর আলোচনা শু আন্দোলনের মধ্যে নারীগণের শিক্ষা ও সামাজিক স্বাধীনতা বিষয়ে আলোচনা ও আন্দোলন চলিল। যে ১৮৭১ সালে ব্রাহ্ম বালিকাদিগের বিবাহোপযুক্ত বয়স স্থির করিবার জন্ত মহা আন্দোলন উপস্থিত হইল, সেই ১৮৭১ সালেই তলে তলে ব্রাহ্মমহিলাদিগর শিক্ষা ও স্বাধীনতা বিষয়ে আন্দোলন চলিল। তাহা অগ্রেই বর্ণন করিয়াছি। ব্রাহ্মমহিলাগণের উপাসনামন্দিরে পরর্দার বাহিরে বসিবার অধিকার লইয়া এই আন্দোলন পাকিয়া উঠিল। কিরূপে ১৮৭২ সালে কেশবচন্দ্র সেন মহাশয় ভারতাশ্রমে বয়স্থ বিদ্যালয় স্থাপন করিলেন; এবং কি কারণে অবলাবান্ধব দল তাহাতে যোগ দিলেন না, তাহ অগ্রে বর্ণন করিয়াছি। ১৮৭৩ সালে গাঙ্গুলী ভায় কুমারী এক্রয়ড নামক নবৃগিতা এক স্বশিক্ষিতা ইংরাজমহলাকে তত্ত্বাবধায়িকা করিয়া “হিন্দুমহিলা বিদ্যালয়” নামে বালিকাদিগের জন্য উচ্চশ্রেণীর এক বোডিং স্কুল স্থাপন করিলেন। তাহার জন্ত অর্থসংগ্ৰহ কয়, ষান বহুনাদির বন্দোবস্ত করা, পাঠাদির ব্যবস্থা করা, ছাত্রীনিবাসে ছাত্রীগণের আহারাদের ব্যবস্থা করা, তাহাদের পীড়াদির সময়ে চিকিৎসাদির বন্দোবস্ত কর, প্রভৃতি সমুদয় কাৰ্য্যের ভর এক গঙ্গোপাধ্যায়, মহাশয়ের উপর পড়িয়া গেল। তিনি আহলাদতচিত্তে সেই সকল শ্রম বহন করিতে লাগিলেন।” আমরা দেখিয়া পরস্পর বলাবলি করিতাম যে মানুষ এতদূর শ্রম করিতে পারে ইহাই আশ্চৰ্য্য।

 কুমারী এক্রয়েড বরিশালের জজ বেভেরিজ সাহেবের সহিত পরিণীত। হইলে ১৮৭৫ সালে ঐ হিন্দু মহিলাবিদ্যালয় বঙ্গমহিলা বিদ্যালয় রূপে পরিণত হয়, এবং কয়েক বংসর পরেই বেথুন কলেজের সহিত একীভূত হইয়া যায়।

 বঙ্গমহিলাবিদ্যালয় উঠিয়া গেলবটে কিন্তু দ্বারকানাথের কার্য শেষ হইল না। এদিকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকদের রাজনীতি চর্চার জন্য ভারতসভা স্থাপিত হইল। এখান গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়ের আর এক কাৰ্য্যক্ষেত্র খুলিল।