লইয়া প্রাণভয়ে তাঁহাকে সর্ব্বদা সশঙ্কচিত্তে বাস করিতে হইত। তখন হইতে তাঁহার যে ধৈর্য্য ও কর্তব্যপরায়ণতার দৃষ্টান্ত আমরা দেখিয়াছি তাহা ভুলিবার নহে।
আর একটা কথা এইখানেই বলিয়া রাখিবার যোগ্য। তাহা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহৃদয়তা। একদা কুন্তী তাঁহার উন্মাদ অবস্থাতে এই গো ধরিলেন যে বিদ্যাসাগর খাওয়াইয়া না দিলে খাইবেন না। অন্তে আহার করাইতে গেলে মুখ বন্ধ করিয়া থাকিতেন, কোনও ক্রমেই মুখে অল্পের গ্রাস লইতেন না। এই সংবাদ যখন বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকটে গেল, তখন তিনি হাসিয়া বলিলেন—“তা আর কি হবে, মেয়েটা কি না খেয়ে মারা যাবে, আমি দুবেলা গিয়া খাওয়াইয়া আসিব।” তিনি সত্য সত্যই কয়েক মাস ধরিয়া দুবেলা আসিয়া কুন্তীকে খাওয়াইয়া যাইতেন! আমরা ইহা দেখিয়াছি। ইহা মিত্র পরিবারের প্রতি, বিশেষতঃ সুযোগ্য জামাতা কালীচরণের প্রতি, বিখ্যাসাগর মহাশয়ের প্রীতি ও শ্রদ্ধার পরিচায়ক মাত্র।
পত্নীর উন্মাদরোগ-প্রাপ্তির দিন হইতে জীবনের শেষ দিন পর্য্যস্ত কালীচরণ বাবু কঠোর ব্রহ্মচর্য ব্রত ধারণ করিয়াছিলেন। আহারে বিহারে, পোষাকে পরিচ্ছদে, কেহ তাঁহাকে বিলাসের ত্রিসীমায় পদার্পণ করিতে দেখে নাই। কেবল জ্ঞান-চর্চা, সাধুসঙ্গ, সদালাপ ও স্বীয় কর্ত্তব্যসাধনে নিমগ্ন থাকিতেন। এই ভাবেই জীবনের শেষ পর্যন্ত তাঁহার দিন অতিবাহিত হইয়াছিল।
একদিকে কালীচরণ বাবু অপর দিকে বিদ্যাসাগর মহাশর, দুই জনেই এই সময়ে ভগ্ন লাহিড়ী পরিবারের পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য বদ্ধ-পরিকল্প ইইলেন। ইঁহারা কলিকাতাতে প্রতিষ্ঠিত হইতেই, বিদ্যাসাগর মহাশয় রামতনু বাবুর দ্বিতীয় পুত্র শরৎকুমারকে ডাকিয়া মেট্ৰপলিটান কালেজের লাইব্রেরিয়ানের পদে নিযুক্ত করিলেন। কিছু কিছু অর্থাগম হইতে লাগিল। পুত্রের সাহায্যে কলিকাতাতে ইঁহাদের দিন একপ্রকায় চলিতে লাগিল।
আর এক সাধু পুরুষের নাম এই খানেই উল্লেখ করা উচিত। ইনি সে সয়কার কলিকাতাবাসী শিক্ষিত ভদ্রলোকদিগের ও সর্ব্বসাধারণের প্রতি ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। ইঁহার নাম শ্যামাচরণ (দে) বিশ্বাস। কলিকাতা সংস্কৃত কলেজের সন্মুখেই ইহার ভবন; সুতরাং প্রতিসূত্রে আবদ্ধ হইয়া, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ, প্যাঁরীচরণ সরকার, প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারী