পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৭২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৬
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

বালক রামতনু কাঁদিয়া ফেলিলেন, বলিলেন—“আজ আমার খাওয়া হয় নাই।” তথন মহামতি হেয়ার তাঁহার মিঠাইওয়ালাকে পেট ভরিয়া মিঠাই খাইতে দিতে বলিলেন। এই প্রকারে দিবাশেষে অনেক দিন হেয়ারের মিঠাইওয়ালার নিকট তাঁহার দিনের আহার মিলিত।

 এইরূপে প্রায় দুই মাসেরও অধিক কাল গত হইল। শেষে হেয়ার বুঝিলেন এ বালক ছাড়িবার পাত্র নয়, বিদ্যা শিক্ষা বিষয়ে ইহার অতিশয় আগ্রহ। তখন তাঁহাকে ফ্রী বালকদের দলে লইতে স্বীকৃত হইলেন। এই অবস্থার এক নূতন বিঘ্ন আাসিয়া উপস্থিত হইল। স্কুলের বালকদিগের পরিচ্ছন্নতার দিকে হেয়ারের অতিশয় দৃষ্টি ছিল। বালকগণ যেরূপ অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থাতে স্কুলে আসিত তাহা দেখিয়া তিনি ক্লেশ পাইতেন। কোন কোনও দিন স্কুল বসিবার বা ভাঙ্গিবার সময়ে তিনি গামছা হস্তে স্কুলের দ্বারে দাঁড়াইতেন এবং প্রবেশ বা নির্গমনের সময় সর্ব্বাপেক্ষা অপরিচ্ছন্ন বালকদিগকে ধরিয়া তিরস্কার পূর্ব্বক মায়ের মত উত্তমরূপে গা মুছিয়া দিতেন। বালকদিগকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখিবার জন্য তিনি ফ্রী বালকদিগের সম্বন্ধে এই নিয়ম করিয়াছিলেন যে তাহাদিগকে স্কুলে প্রবিষ্ট করিবার সময় তাহাদের অভিভাবকদিগকে একখানা একরারনামা লিখিয়া দিতে হইবে যে কোন বালক যদি অপরিচ্ছন্ন অবস্থাতে স্কুলে আসে তাহা হইলে অভিভাবককে জরিমানা দিতে হইবে।

 লাহিড়ী মহাশয়কে ভর্ত্তি করিবার সময়ে সেই প্রশ্ন উঠিল। হেয়ার বলিলেন,—তাঁহার জ্যেষ্ঠকে উক্ত প্রকার একরারনামা লিখিয়া দিতে হইবে। কেশবচন্দ্র ধর্মভীরু লোক ছিলেন। তিনি ভাবিলেন আমি যখন কলিকাতায় থাকি না, তখন সহোদর কি অবস্থাতে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাইতেছে তাহা দেখা আমার পক্ষে সম্ভব নহে; এরূপ স্থলে আমি কিরূপে প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করি। তিনি এক প্রকার নিরাশ হইয়া ছাড়িয়া দিলেন। অবশেষে বিদ্যালঙ্কার অনেক বুঝাইয়া তাঁহাকে রাজি করিলেন। রামতনু স্কুল সোসাইটীর স্থাপিত স্কুলে ফ্রীবালকরপে ভর্ত্তি হইলেন। ঐ স্কুল পরে কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুল, ও তৎপরে হেয়ার স্কুল নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছে। এই স্থানে মহাত্মা হেয়ারের জীবনচরিত কিছু বলা আবশ্যক।

 ডেভিড হেয়ার ১৭৭৫ গ্রীষ্টীকে স্কটলণ্ডদেশে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮০০ সালে ঘড়িওয়ালার কাজ লইয়া এদেশে আগমন করেন। এখানে বাসকালে