কর্ম্মসূত্রে এদেশীয় অনেক ভদ্রলোকের সহিত তাঁহার বন্ধুতা হয়। হেয়ার নিজে উচ্চদরের শিক্ষিত লোক ছিলেন না, কিন্তু ইহা অনুভব করিয়াছিলেন যে এদেশে ইংরাজী শিক্ষা প্রচলিত না হইলে এদেশের লোকের অবস্থার পরিবর্ত্তন ঘটিবে না। তদনুসারে তাঁহার দোকানে কেহ ঘড়ি কিনিতে বা মেরামত করিতে গেলেই তিনি এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করিতেন। ১৮১৪ সালে রামমোহন রায় যখন কলিকাতাতে অবস্থিত হইলেন, তখন অল্পকালের মধ্যই উভয়ের মধ্যে মিত্রতা জন্মিল। ১৮১৬ সালে একদিন হেয়ার স্বতঃ প্রবৃত্ত হইয়া রামমোহন রায়ের আত্মীয়-সভার এক অধিবেশনে উপস্থিত হইলেন। সভা ভঙ্গের পর দুই বন্ধুতে ইংরাজী শিক্ষা প্রবর্ত্তিত করিবার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে অনেক কথাবার্ত্তা হইল। অবশেষে স্থির হইল যে এদেশীয় বালকগণকে ইংরাজী শিক্ষা দিবার জন্য একটী স্কুল স্থাপন করা হইবে। আত্মীয় সভার অন্যতম সভ্য বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায় এই প্রস্তাব তদানীন্তর সুপ্রিমকোটের প্রধান বিচারপতি সার হাইড ঈষ্ঠ (Sir Hyde East) মহোদয়ের নিকট উপস্থিত করেন এবং তাঁহার উৎসাহ ও যত্নে হিন্দু কালেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাহার বিবরণ পর পরিচ্ছেদে দেওয়া যাইবে। মহাবিদ্যালয় বা বর্ত্তমান হিন্দুস্কুল প্রতিষ্ঠিত হইলে, হেয়ার তাহার কমিটীর একজন সভ্য নিযুক্ত হইলেন। তিনি ডাক্তার এইচ, এইচ উইলসনের (Dr. H. H. Wilson) পরামর্শের অধীন থাকিয়া অবিশ্রান্ত মনোযোগের সহিত স্কুলটীর উন্নতি সাধনে নিযুক্ত হইলেন।
১৮১৭ সালের ২০ জানুয়ারি দিবসে হিন্দুকলেজ খোলা হয়। সেই বৎসরেই হেয়ারের প্রধান উদ্যোগে ও তৎকালীন ইউরোপীয় ও দেশীয়, ভদ্রলোকদিগের সাহায্যে স্কুলবুক সোসাইটী নামে একটী সভা স্থাপিত হইল। ঐ সভার সভ্যগণ ছাত্রগণের পাঠোপযোগী ইংরাজী ও বাঙ্গালা নানাপ্রকার গ্রন্থ প্রণয়ন ও মুদ্রিত করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। এই সভার স্থাপন বঙ্গদেশের নবযুগের একটী প্রধান ঘটনা। কারণ এই সভার মুদ্রিত গ্রন্থাবলী এদেশে শিক্ষার এক নূতন দ্বার ও নূতন রীতি উন্মুক্ত করিয়াছিল। রামমোহন রায় তাঁহার বন্ধু হেয়ারের সহায় হইয়া নূতন ধরণের স্কুলপাঠ্য গ্রন্থ সকল প্রণয়ন করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। তিনি একখানি বাঙ্গালা ব্যাকরণ ও জ্যাগ্রাহি নাম দিয়া একখানি ভূগোলবিবরণ লিখিয়াছিলেন। তাঁহার প্রণীত ব্যাকরণ পাওয়া গিয়াছে, কিন্তু জ্যাগ্রাহির