পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ভূমিকা

 বাল্যকাল হইতেই রামতনু লাহিড়ী মহাশয়ের নাম আমার নিকট সুপরিচিত। লাহিড়ী মহাশয় আমার পূজ্যপাদ মাতামহ স্বৰ্গীয় হরচন্দ্র ন্যায়রত্ন মহাশয়ের নিকট কিছুদিন বাড়ীতে পড়িয়াছিলেন। কতদিন, এবং কোন সময়ে, তাহা বলিতে পারি না। কিন্তু তাহার ফল এই হইয়াছিল যে সেই স্বল্পকাল মধ্যে আমার মাতামহ তাঁহার শিষ্যের এমন কিছু গুণ দেখিয়াছিলেন যাহাতে তাঁহাকে ভুলিতে পারেন নাই; সর্ব্বদা তাঁহার প্রশংসা করিতেন। এইরূপে শৈশব হইতেই আমার পিতা মাতার মুখে রামতনু লাহিড়ী মহাশয়ের প্রশংসা শুনিয়া আসিতেছি। উত্তরকালে বড় হইয়া ও কলিকাতাতে আসিয়া যত লোককে দেখিবার জন্য ব্যগ্র হইয়াছিলাম, তন্মধ্যে এই সাধু পুরুষ একজন। আমার প্রতি বিধাতার এই এক কৃপা যে আমি যত মানুষকে অন্তরের সহিত প্রীতি ও শ্রদ্ধা করিয়াছি এবং দেখিবার জন্য ব্যগ্র হইয়াছি, কোন না কোনও সূত্রে তাঁহাদের অধিকাংশকেই দেখিয়াছি।

 ১৮৬৯ সালে যখন লাহিড়ী মহাশয়ের সহিত আমার প্রথম পরিচয় হইল, তখন যেমন চুম্বকে লৌহকে টানে, তেমনি তিনি আমাকে টানিয়া লইলেন। আমাকে একেবারে আপনার লোক করিয়া ফেলিলেন। তদবধি তাঁহার পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন, সকলেই আমাকে আত্মীয় বলিয়া লইয়াছেন। ইহা তাঁহাদের সদাশয়তার প্রমাণ।

 তাঁহার শ্রাদ্ধবাসরে সমাগত ভদ্রলোকদিগের অনেকেই এই ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন যে তাঁহার একখানি জীবন-চরিত লিখিত হয়। তাঁহার পুত্র শরৎকুমারও আমাকে সে বিষয়ে অনুরোধ করিলেন। গৃহে আসিয়া ভাবিতে ভাবিতে তাঁহার একখানি জীবন-চরিত লিখিবার ইচ্ছা হইল। কিন্তু অগ্রে ভাবিয়াছিলাম বিশেষ ভাবে তাঁহার অনুরক্ত ব্যক্তিগণের জন্য একখানি ক্ষুদ্রাকার জীবন-চরিত লিখিব। যাঁহারা প্রকাশ্য ভাবে কখনও কোনও লোকহিতকর কার্য্যে অগ্রণী হন নাই, যাঁহাদের গুণাবলী বনজাত কুসুমের ন্যায় কেবলমাত্র কতিপয় হৃদয়কে আমোদিত করিয়াছে, যাঁহাদের জীবন ব্যাপ্তিতে বড় না হইয়া কেবলমাত্র গভীরতাতেই বড় ছিল, তাঁহাদের জীবন এই প্রকারেই লিখিত হওয়া ভাল; কারণ সাধুতার রসাস্বাদন অনুরাগী