পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৯২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬০
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

তিনি ঐ পৌত্তলিক প্রণালীর দোষকীর্ত্তন করিয়া পারসীতে এক গ্রন্থ রচনা করেন। তাহা লইয়া নাকি তাঁহার পিতার সহিত মনান্তর ঘটে। সেই মনান্তর নিবন্ধন তিনি পিতৃভবন পরিত্যাগ পূর্ব্বক সন্ন্যাসী ফকীরদের সঙ্গে দেশভ্রমণে বহির্গত হন। নানা দেশ ও নানা তীর্থ পর্য্যটন করিয়া অবশেষে তিব্বতদেশে উপস্থিত হন। সেখানে বৌদ্ধমতাবলম্বীদিগের কুসংস্কার ও পৌত্তলিকতার প্রতিবাদ করাতে, তাহারা তাঁহার প্রাণহানি করিতে উদ্যত হয়। তখন তিনি তিব্বতবাসিনী কতিপয় রমণীর সাহায্যে রক্ষা পাইয়া স্বদেশে পলাইয়া আসেন। আসিয়া কাশীধামে সংস্কৃত ভাষার অনুশীলনে নিযুক্ত হন। এই সময়ে তাঁহার পিতার সহিত তাঁহার পুনরায় সম্মিলন হয়। পিতা তাঁহাকে স্বদেশে ফিরাইয়া আনেন এবং বিষয়কর্ম্মে প্রবৃত্ত করেন। পিতার আদেশে দ্বাবিংশতি বর্ষ বয়ঃক্রম কালে তিনি স্বীয় চেষ্টাতে ইংরাজী ভাষা অধ্যয়ন করিতে আরম্ভ করেন এবং ইংরাজগবর্ণমেণ্টের অধীনে চাকুরী স্বীকার পূর্ব্বক রামগড়, ভাগলপুর প্রভৃতি স্থানে কিছুদিন কর্ম্ম করিয়া, অবশেষে রঙ্গপুরের কালেক্টর ডিগ্‌বী সাহেবের শেরেস্তাদার বা দেওয়ানের পদে প্রতিষ্ঠিত হন। ১৮০৩ অব্দে রামকান্ত রায়ের মৃত্যু হয়। পিতার মৃত্যুর পর তিনি মুরশিদাবাদে গমন করেন; এবং সেখানে “তহতুল মোহদ্দীন” নামক তাঁহার সুপ্রসিদ্ধ পারসী ভাষাতে লিখিত গ্রন্থ মুদ্রিত ও প্রচারিত করেন। পরে দশ বৎসর বিষয়কর্ম্ম করিয়া তিনি ১৮১৪ খৃষ্টাব্দে কলিকাতা নগরে স্থায়ী রূপে আসিয়া বাস করেন।

 তিনি কলিকাতার আসিবার পূর্ব্বে রঙ্গপুরে থাকিতেই ধর্ম্মসংস্কার বিষয়ে তুমুল আন্দোলন উপস্থিত করিয়াছিলেন। সেখানে বিষয়কর্ম্ম করিয়া যে কিছু অবসর পাইতেন, তাহা নানা সম্প্রদায়ের লোকের সহিত ধর্ম্মালোচনাতে যাপন করিতেন। সায়ংকালে তাঁহার ভবনে ব্রাহ্মণ পণ্ডিত, সাধু, সন্ন্যাসী, মুসলমান মৌলবী, জৈন মারোয়ারী প্রভৃতি অনেক সম্প্রদায়ের লোকের সমাগম হইত। রাজা তাঁহাদের মধ্যে সমাসীন হইয়া সকলের বাগ্বিতণ্ডা শুনিতেন এবং যথাসাধ্য মীমাংসা করিবার চেষ্টা করিতেন। এখানেও তিনি সকল শ্রেণীর নিকটে একেশ্বর বাদ প্রচার করিতেন। এরূপ জনরব যে তিনি রঙ্গপুরে থাকিতে পারস্য ভাষায় একেশ্বর বাদ প্রতিপাদক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুস্তিক রচনা করিয়াছিলেন; এবং বেদান্তদর্শন অনুবাদ করিয়াছিলেন। এই সকল আন্দোলনের ফলস্বরূপ রঙ্গপুরেই তাঁহার এক প্রবল প্রতিদ্বন্দী দেখা