পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ (নিউ এজ ২য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ V হইত। শুনিতে পাওয়া যায় যে ছেলে লুকাইয়া গুরুমহাশয়কে যত দিতে পারিত, সে তত তাহার প্ৰিয় হইত। সে অনুপস্থিত থাকিলে বা পাঠে অমনযোগী হইলেও সমুচিত সাজা পাইত না। যে সকল বালক কিছু দিতে পাবিত না, তাহাদিগকে সর্বদা সশঙ্ক থাকিতে হইত। উঠিতে বসিতে, নড়িতে চডিতে, গুরুমহাশয়েব বেত্ৰ তাহাদেব পৃষ্ঠে পন্ডিত। ' হাত ছডি, লাডুগোপাল, ত্ৰিভঙ্গ প্ৰভৃতি সাজার বিবিধ প্ৰকাব ও প্ৰণালী ছিল। পাঠশালে আসিতে বিলম্ব হইলে চাতু ছডি খাইতে হইত , অর্থাৎ আসনে বসিবার পুর্বে গুরুমহাশয্যের সমক্ষে দক্ষিণ হস্তের পাতা পাতিমা দাডাইতে হাইতি, অমনি সপাসপ, পাচ বা দশ ঘা বেত তদুপৰি পডিত । এই গেল হাত ছডি। লাডুগোপাল আর এক প্রকার। অপবাধী বালককে গোপালের ন্যায়, অর্থাৎ চতুষ্পদশালী শিশুব ন্যান্য দুই পদ ও এক হস্তের উপবে রাখিযা তাহার দক্ষিণ হস্তে একখানি এগাব ইঞ্চি ইট বা অপর কোন ভাবি দ্রব্য চাপাইয়া দেওয হইতা , হাত ভাবিদ্যা গেলে, বা কোন ও প্ৰকাবে ভাবি দ্রব্যটি স্বস্থানভ্রষ্ট হইলে তাহাব পশ্চাদেশেবা বস্ত্ৰ উত্তোলন পুর্বক গুরুতর বেত্ৰ প্ৰহস্তাব কবি তইত । ত্ৰিভঙ্গ আব্ব এক প্ৰকাব। শুষ্ঠামেব বঙ্কিম মূত্তিব্য ন্যায় বালককে এক পাযে দণ্ডাযমান কবিয হস্তে একটি গুরু দ্রব্য দেওয হইত। , একটু হেলিলে বা বাবেক মাত্র পা খানি মাটিতে ফেলিলে অমনি পশ্চাদ্দেশেব বস্ত্ৰ তুলিয়া কঠিন বেত্ৰাঘাত করা হইত। কোন কোনও গুরু ইহাব অপেক্ষাও গুরুতব শাস্তি দিতেন , তাহাকে চ্যাংদোলা বলিত । কোনও বালক প্ৰহাবেব ভযে পাঠশাল হইতে পালাইলে বা পাঠশালে না। আসিলে এই চ্যাংদোলা সাজা পাইত । তাহা এই, তাহাকে বন্দী কবিবাব জন্য চারি পাঁচ জন অপেক্ষাকৃত অধিক-বযস্ক ও বলবান ছাত্র প্ৰেবিত হইত। তাতারা তাহাকে ঘবে, বাহিবে, পথে, ঘাটে, বা বৃক্ষশাখায, যেখানে পাইত সেখান হইতে বন্দী কবিয়া আনিত । আনিবার সময। তাতাকে হঁটিয়া আসিতে দিত না, হাতে পায়ে ধরিযা ঝুলাইয়া আনিত। তাহাব নাম চ্যাংদোলা । এই চ্যাংদোলা অবস্থাতে বালক পাঠশালে উপস্থিত হইবামাত্র গুরুমহাশয় বেত্ৰহস্তে সেই অসহায় বালককে আক্ৰমণ করিতেন । এই প্ৰহার এক এক সময়ে এত গুরুতর হইত যে, হতভাগ্য বালক ভযে বা প্ৰহাবের যাতনায় মলমূত্রে ক্লিয় হইয়া যাইত। ১৮৩৪ সালে লর্ড উইলিয়াম বেণ্টিঙ্ক, মিষ্টাব উইলিয়াম এডামকে দেশীয় শিক্ষাব্য অবস্থা পরিদর্শনার্থ নিযোগ করিয়াছিলেন। তিনি পাঠশালা সকলের অবস্থা পবিদর্শন করিয়া গবৰ্ণমেণ্টের নিকট একটি রিপোর্ট প্রেরণ করেন। তাহাতে প্ৰায় চতুর্দশ প্রকার সাজা দিবাব প্ৰণালীর উল্লেখ দেখা যায়। তাহার অনেকগুলির বিবরণ শুনিলে হৃৎকম্প উপস্থিত হয় । বালক মাটিতে বসিয়া নিজের এক খানা পা নিজের স্কন্ধে চাপাইয়া থাকিবো ; বা নিজের