পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ (নিউ এজ ২য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ প্ৰশংসার বিষয় হইয়া দাড়াইয়াছিল। এ বিষয়ে যে যত সাহসী ও কৃতকাৰ্য্য হইত। সেই যেন বাহাদুর বলিযা গণ্য হইত। এইটি মুসলমান অধিকারের সর্বপ্রধান কলঙ্ক। ইহাতে জাতীয় নীতিকে একেবারে দূষিত করিয়া ফেলিয়াছিল। এই কারণে দেখিতে পাই মুসলমান অধিকার কালে যে সকল সংস্কৃত কাব্য রচিত হইয়াছে তাহার রুচি বিকৃত । অধিক কি, এই অধিকার কালে যে সকল তন্ত্র শাস্ত্র রচিত হইয়াছে, তাহাতে ও ইন্দ্ৰিয়াসক্তি ধৰ্ম্মেব নাম ধাবণ করিয়া দেখা দিয়াছে। এই কালমধ্যে আভু্যুদিত অধিকাংশ ধৰ্ম্ম সম্প্রদায় ইন্দ্ৰিয়াসক্তিব পূতিগন্ধে আঙ্গুত। মুসলমান অধিকারেব তৃতীয় অনিষ্ট ফল তোষামোদজীবিতা, আত্মগোপন ও প্ৰবঞ্চনাপরতা । দেশীয ধনীগণ তোষামোদ, আত্মগোপন ও প্ৰবঞ্চনা দ্বারা নবাবদিগেব অত্যাচাব হইতে বাঁচিবার চেষ্টা কবিতেন। তঁহাদেব দৃষ্টান্তের অনুসাবণ কবিয়া, তাহদের অত্যাচাব হইতে রক্ষা পাইবাব আশায় অপব সকলেও তোষামোদ ও প্ৰবঞ্চনাব আশ্ৰয লইত । এই কাপে পরাধীনতাবশতঃ হিন্দুদিগের প্রাচীন সত্যনিষ্ঠা একেবাবে চলিয়া গিয়াছিল বলিলে অত্যুক্তি হয় না । পথে ঘাটে, হাটে বাজাবে, লোকে মিথ্যা কহিতে ও প্ৰবঞ্চনা করিতে লজ্জা পাইত না । তৎপবে যাহা কিছু অবশিষ্ট ছিল ইংরাজিদিগেব রাজস্ব আদায্যের প্রণালী, আইন ও আদালত স্থাপিত হইয় তাহাও অন্তহিত হইল । লোকে দেখিল সত্য নিদ্ধারণ ইৎবাজেব আইন বা আদালতের লক্ষ্য নহে, সত্য প্রমাণিত হইল কি না তাহা দেখাই উদ্দেশ্য। সুতরাং, লোকে জানিল যে, যে যত মিথ্য সাক্ষ্য সংগ্ৰহ করিতে পাবিবে। তাহারই } জায়াশা তত অধিক । এইরূপে ইংরাজ-প্ৰতিষ্ঠিত আদালতগুলি মিথ্য সাক্ষ্য প্ৰবঞ্চনাদির প্রধান স্থান হইয়া দাডাইল। লোকে জাল জুযাচুরি দ্বারা কৃতকাৰ্য্য হইয়া স্পৰ্দ্ধা কবিতে আরম্ভ করিল। উৎকোচাদি দ্বারা ধন লাভ কবিয়া সমাজ মধ্যে গৌরব লাভ করিতে লাগিল। দেশের একাপ দুৰ্দশা না ঘটিলে মেকলে বাঙ্গালিজাতির প্রতি যেরূপ কটুক্তি বর্ষণ কবিয়াছেন, তাহা করিবার সুযোগ পাইতেন না। দেশেব সাধারণ নীতির এই দুৰ্গতি হওয়াতে সর্বত্রই লোকের প্রতিদিনের আলাপ আচরণ তদনুরূপ হইয়া গিয়াছিল। কৃষ্ণনগর ও সেই দূষিত বায়ুকে অতিক্ৰম করিতে সমর্থ হয নাই। পুর্বেই বলিয়াছি রাজা ঈশ্বরচন্দ্র ১৮০২ খ্ৰীষ্টাব্দে লোকান্তরিত হন এবং রাজা গিরীশচন্দ্র রাজপদে প্ৰতিষ্ঠিত হন। রামতনু লাহিড়ী মহাশয় গিরীশচন্দ্রের অধিকার কালেই জন্ম গ্ৰহণ করিয়াছিলেন । এই সময়ে কৃষ্ণনগবের মধ্যবিত্ত ভদ্রসমাজ তিন প্ৰধান ভাগে বিভক্ত ছিল। প্ৰথম কেন্দ্রীভূত রাজপরিবাব ও তাঁহাদের স্বসম্পৰ্কীয়, সংসৃষ্ট ও আশ্রিত ব্যক্তিগণ ; ইহাদের সংখ্যাই বোধ হয় অধিক ছিল। দ্বিতীয় স্বাধীনবৃত্তি-সম্পন্ন পরিবারবর্গইহাদের অনেকে পারস্য ভাষায় সুশিক্ষিত হইয়া বিষয় কৰ্ম্মোপলক্ষে নানাস্থানে