পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা : পুরুষ-ষজ্ঞ - S a ho সকল কৰ্ম্মই কেবল স্বভাব-প্রেরিত জৈব কৰ্ম্মরূপে না দেখিয়া, সেই এক দেবতার উদ্দেশে অর্পণ করিতে হইবে । তন্ত্রের ভাষায়, যাহা কিছু করিবে, তাহা জগন্মাতার পূজারূপেই করিবে। এইরূপে সৰ্ব্বকৰ্ম্ম পূজারূপে অৰ্পণ করিলে পূজক খাট হন না, ইহাতে তিনি আপনাকে বড়ই করেন ; কেন না, পূজা মাত্রই আত্মপূজা, পূজক নিজেই নিজের দেবতা। তন্ত্রমতে মানস পূজার স্তবটি স্মরণ করুন,— আত্মা ত্বং, গিরিজা মতি, সহচরা; প্রাণাঃ, শরীরং গৃহং, পূজা তে বিষয়োপভোগরচনা, নিদ্র সমাধিস্থিতি:, সঞ্চারঃ পদয়ো: প্রদক্ষিণবিধিঃ, স্তোত্রাণি সৰ্ব্ব গিরঃ, যদ যত কৰ্ম্ম করোমি তং তদখিলং শস্তে ত্বদারধানম্। অহে শঙ্কু, আমিই তুমি, তোমাতে আমাতে কোন ভেদ নাই। আমার মতিই তোমার পত্নী পাৰ্ব্বতী। আমরে প্রাণসকলই তোমার সহচর ভূতগণ ; আমার শরীরই তোমার গৃহ । আমি যে বিষয়োপভোগের ব্যবস্থা করিয়া থাকি, ইহাই তোমার পূজা। আমি যখন নিদ্রা যাই, তখন তোমাতেই সমাধি লাভ করি। পৃথিবীতে পা ফেলিয়। এ-দিক্‌ ও-দিক্‌ যে ভ্রমণ করি, ইহাতে তোমাকেই প্রদক্ষিণ করা হয়। আমি যে কিছু কথা কহি, তাহা তোমারই স্তুব। আমি যে যে কৰ্ম্ম করি, সে সকল ত তোমারই আরাধনা। দেখিবেন, আঙ্গিরস ঘোর ঋষি দেবকীনন্দন কৃষ্ণকে যাহা বলিয়াছিলেন, তন্ত্রও তাহারই অন্য ভাষায় পুনরুক্তি করিতেছেন । আমিই তুমি, এর চেয়ে বড় কথা মানুষের মুখ দিয়া বাহির হইতে পারে না। ফলে আমিই বিশ্বকৰ্ম্মা ; বিশ্বজগৎ নিৰ্ম্মাণের কাদামাটি আমার হাতেই রহিয়াছে ; সেই মশলা দিয়া আমার জগৎ আমার ইচ্ছামত আমি নিৰ্ম্মাণ করিয়া লইতে পারি। “মধুমৎ পার্থিবং রজঃ”—পৃথিবীর ধূলিকে আমি ইচ্ছামত মধুতে পরিণত করিতে পারি। এই জন্য বেদপন্থী আপনাকে খুব বড় করিয়া দেখিতে অভ্যস্ত। জগতের যাবতীয় দ্রব্যকে তিনি বড় করিয়া দেখেন ; প্রত্যেক তুচ্ছ ঘটনাকেই খুব বৃহৎ করিয়া দেখিতে তিনি অভ্যস্ত। তাহার হাতে যে পরশ-পাথর আছে, তাহার ম্পর্শে মাটি সোনা হইয়া যায়। নাল্পে স্থখমস্তি—অল্পে তাহার স্থখ নাই। এইজন্য লৌকিক ব্যবহারেও যে-কোন অঙ্কের গায়ে দশ বারটা শূন্য বসাইতে র্তাহার কিছু মাত্র সঙ্কোচ হয় না। র্তাহার দর্শনে, বিজ্ঞানে, সাহিত্যে, সৰ্ব্বত্র তাহার এই অভ্যাসের—লোকে বলিবে এই কদভ্যাসের পরিচয় পাওয়া যায়। অনেক সময়ে লোকে এই জন্যে হাসে ; কিন্তু তিনি আপনাকে খুব বড় বলিয়া জানেন, এবং জগতে যাহা কিছু আছে, সকলই সেই পরিমাণে বড় করিয়া দেখেন । আপনারা Individualism বলিয়া একটা কথা শুনিয়াছেন—পশ্চিমসমূদ্রের ফেনার সঙ্গে এই বস্তুটা সম্প্রতি আমাদের দেশে ভাসিয়া আসিয়াছে। ইহার অর্থ আপনাকে স্বাধীন ও বড় করা– নৈসর্গিক প্রবৃত্তির মুখে আপনাকে ছাড়িয়া দিয়া আপনাকে বড় করা— যাবতীয় নিয়মের ও সংযমের, আচারের ও নিষ্ঠার বন্ধন হইতে আপনাকে মুক্তি দিয়া বড় করা। ইউরোপের রাষ্ট্রতন্ত্র রোমান ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ; রোমান,