পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র বংশধারা রক্ষায় অশক্ত। পিগুবিচ্ছেদ ভয়ে পিতৃগণ চোখের জল ফেলিতেছেন। যে ব্যক্তি পিতৃগণকে পিণ্ড দেয়, সে-ই পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকারী। অতএব, যে ব্যক্তি বংশধারা রক্ষা করিতে পারিতেছে না, সে পৈতৃক সম্পত্তিতে পূর্ণমাত্রায় অধিকার পাইতে পারে না। ফলে, অপত্নীক ব্যক্তি সামাজিকের পূর্ণ অধিকার পাইতে পারে না। সমাজভুক্ত অন্য লোকের সহিত তাহার ষোল আনা সম্পর্ক ঘটিতে পারে না। সামাজিক জীবনের পূর্ণতার জন্য বিবাহ আবশ্যক । জীবনের সংস্কারের জন্য বিবাহ আবশ্যক। বিবাহ জীবনের অন্তিম সংস্কার । এই হেতু দ্বিজাতি-সমাজে সামাজিক গৃহস্থ কার্য্যতঃ বিবাহে বাধ্য। কিন্তু মনে রাখিবেন যে, আচাৰ্য্য-গৃহ হইতে বেদ-বিদ্যা লাভ করিয়া সমাবর্তনের পর তবে বিবাহে অধিকার জন্মে। এ-কালে পাশ কর। ছেলের বিবাহের বাজারে দর বেশী ; সে-কালে ছেলে পাশ করিয়া আসিতে না পারিলে বিবাহে অধিকারই পাইত না। আমাদের ধৰ্ম্মশাস্ত্র প্রাচীন কালে যে থিয়োরি খাড়া করিয়াছিল, এ-কালে তাহার বাধাবাধি নাই ; তথাপি ব্রাহ্মণের ছেলে গলায় একগাছা পৈতা দেখাইতে ন। পারিলে বিবাহ করিতে পায় না। পৈতাগাছটায় বলিয়া দেয় যে, সে যতই মূখ হউক, অন্তত: বেদের গায়ত্রী মন্ত্রটি, বেদ-বিদ্যার যাহা সার মন্ত্র, সেই গায়ত্রী মন্ত্রটি অভ্যাস করিয়াছে। মনে কারতে পারি যে, সে-কালে শাস্থের বন্ধন এতটা আলগা ছিল না। বেদ-বিদ্যার অন্ততঃ কিয়দংশ আয়ত্ত করতে না পারলে সমাবর্তনের আচার্য্যের অনুমতি পাইত না এবং সমাবৰ্ত্তন না হইলে বিবাহ হইত না । অতএব যে একবারে গণ্ডমূখ, সে বিবাহ করিতে পাইত না, গৃহী হইতে পারিত না, সমাজে এক রকম অব্যবহার্য্য হইয়া থাকিত। ফলে, থিয়োরি অনুসারে দ্বিজাতি-সমাজে মূখের স্থান ছিল না। প্রত্যেক দ্বিজের পক্ষে বিদ্যালাভ এইরূপে একান্ত আবশ্বক—Compulsory হইয়া পড়িয়াছিল। গৃহীর পক্ষে বিবাহ যেমন compulsor v, বিদ্যালাভ সেইরূপ compulsory ; কেন না, মূখের বিবাহ নিষিদ্ধ। এ-কালে সাধারণ লোকশিক্ষা ( mass education ) বাধ্যতামূলক করিবার প্রস্তাব হইতেছে, কিন্তু কিরূপে compulsory করা যাইবে, তাহার উপায় হইতেছে না ; রাষ্ট্রশক্তিকে এজন্ত আহবান করা হইতেছে । সে-কালে শাস্ত্রকারদের ব্যবস্থায় বিদ্যালাভ compulsory করা হইয়াছিল ; বেদবিদ্যা লাভে অর্থাৎ সে-কালের উচ্চতম বিদ্যা লাভে বাধ্যতা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। বিবাহ আটকাইয়। এ-কালের বিশ্ববিদ্যালয় এ-কালের উচ্চশিক্ষালাভে সেরূপে বাধ্যতা প্রতিষ্ঠিত করিতে পারিবেন কি না, মানয়ীয় ভাইস চ্যান্সেলার মহোদয় তাহা বিবেচনা করিবেন । ভারতবর্ষের এই যে অতি পুরাতন সমাজ, থিয়োরি অনুসারে যে সমাজে অশিক্ষিত ব্যক্তি গৃহী বা গৃহপতি হইতে পারিত না, গৃহস্থের অধিকার পাইত না, ধৰ্ম্মকৰ্ম্মে অধিকার পাইত না, সমাজমধ্যে পতিত প্রায় হইয়া থাকিত, সেই সমাজই দ্বিজাতি-সমাজ । সেই সমাজের অন্তর্গত প্রত্যেক ব্যক্তিই দ্বিজ ; ব্রাহ্মণ, ক্ষয়িয় বৈশু, এই তিনের যে-কোনও বর্ণেরই হউক, অথবা যে-কোনও মিশ্রবণেরই হউক, সে-ই দ্বিজ । যে একবার নৈসগিক মানবজন্ম পাইয়াছে ; আর একবার বেদবিদ্যা লাভে সংস্কৃত হইয়া, বিশুদ্ধ হইয়া,