পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা : যজ্ঞ—অগ্ন্যাধান ও অগ্নিহোত্র >Q ব্ৰহ্মা নামক ঋত্বিকৃ সেই সময়ে সাম গান করেন। গার্হপত্যের অগ্নি লইয়া অধ্বযু্য আহবনীয় স্থানে চলেন। ঘোড়াটি আগে আগে চলে। যজমান চলেন ঘোড়ার পশ্চাতে । ব্রহ্মা সাম গাইতে থাকেন । আহবনীয়ের স্থানে একটি পা রাখিয়৷ ঘোড়াটি পশ্চিমমুখে দাড়াইয়া থাকে। ঘোড়ার সেই পায়ে সেই অগ্নি স্পর্শ করাইয়৷ অধ্বযু সেই আগুন আহবনীয়ে রাখিয়া দেন। ব্রহ্মা তখন আবার সাম গান করেন। এইরূপে গার্হপত্য এবং আহবনীয় অগ্নির স্থাপন হইলে অধ্বযু্য পুনরায় গার্হপত্য হইতে আগুন লইয়া দক্ষিণাগ্নির স্থানে রাখিয়া দেন। এইরূপে তিন অগ্নি স্থাপনের পর ব্ৰহ্ম তিন বারে তিনটি সাম গান করেন । তৎপরে সকলে অগ্নি প্রদক্ষিণ করিয়া ঘোড়াটিকে ছাড়িয়া দেন। তৎপরে পূর্ণাহুতি হোম । গার্হপত্যের আগুনে থানিকট। ঘি গরম করা হয়। অধ্বষু জুহু নামক কাঠের হাত দ্বারা সেই ঘি লইয়া আহবনীয়ের পাশ্বে বসিয়া যজুর্মন্ত্র পড়িয়া আহবনীয় অগ্নিতে আহুতি দেন। যজমান তাহাকে স্পর্শ করিয়া থাকেন। ইহাই হইল পূর্ণাহুতি। এই পূর্ণাহুতিতেই অগ্ন্যাধান কৰ্ম্ম সমাপ্ত হয়। অগ্ন্যাধানের পর কয়েক দিন যজমান ব্রহ্মচর্য্যের নিয়ম অবলম্বন করিয়া থাকেন। গার্হপত্যের আগুন দিবারাত্রি জ্বলিতে থাকে। উহাকে নিবাইতে দেওয়া হয় না। উহা নিবাইলে প্রত্যবায় ঘটে । আহবনীয় এবং দক্ষিণাগ্নি দিবারাত্রি জলে না, আবশ্যক মত গাহঁপত্য হইতে আগুন আনিয়া ঐ দুই অগ্নি জ্বালান হয়, এবং তাঁহাতে দেবতাগণের উদ্দেশে বা পিতৃগণের উদ্দেশে যাগ হয়। এই অগ্ন্যাধান কৰ্ম্ম যজমানের জীবনে অতি প্রধান কৰ্ম্ম । অগ্ন্যাধানের পর তাহার বিশেষণ হয় আহিতাগ্নি। অাহিতাগ্নি গৃহস্থ ষোল আনা গৃহস্থ । অগ্ন্যাধানের পর তিনি যাবতীয় শ্রেীত কৰ্ম্মে, যাবতীয় দেবযজ্ঞে এবং পিতৃষজ্ঞে অধিকার লাভ করেন। দেবগণ এবং পিতৃগণ অলক্ষ্য ভাবে মানুষের মর্ত্য জীবনের নিয়ামক, শুভাশুভ-ফলদাতা। আগেই বলিয়াছি, দেবগণ মনুষ্যদত্ত হব্য ভোজনের জন্য অপেক্ষা করিতেছেন। পিতৃগণ স্বধাভোজনের প্রয়াসী । দেবগণের নিকট এবং পিতৃগণের নিকট মানুষের ঋণ আছে, সেই ঋণ মোচন করিয়া না দিয়া যাইতে পারিলে মানবজীবন অসম্পূর্ণ থাকে। অতএব জীবনের সম্পূর্ণতা বিধানের জন্য দেবগণের এবং পিতৃগণের তৃপ্তিসাধন করিতেই হইবে। অতএব গৃহস্থের পক্ষে আহিতাগ্নি হওয়া আবশুক । সাধারণতঃ অগ্নির দ্বারা দেবগণের এবং পিতৃগণের প্রাপ্য পৌছাইয়া দেওয়া হয় । অগ্নি নিজেও একজন দেবতা এবং তিনি দেবগণের পুরোহিত। ঋগ্বেদসংহিতার প্রথম ঋকৃটিই স্মরণ করিবেন, অগ্রিম্ ঈড়ে পুরোহিতম, যজ্ঞস্য দেবম্ ঋত্বিজম, হোতারং রত্নধ্যতমম্। অগ্নি দেবগণের পুরোহিত, তিনিই হোতা নামক ঋত্বিক অর্থাৎ তিনিই দেবগণকে আহবান করিয়া যজ্ঞস্থলে ডাকিয়া আনেন ; তিনিই দেবগণের মুখ ; তাহার মুখে হব্য দান করিলে দেবগণকে দেওয়া হয়। তিনিই হব্যবহ ; দেবগণের জন্য হব্য বহন করিয়া লইয়া যান। গার্হপত্য অগ্নি বস্তুতঃ এক পক্ষে গৃহস্থের, অন্য পক্ষে দেবগণের মধ্যবর্তী। তিনিই গৃহস্থালীর এক রকম কর্তা এবং শুভাশুভদাতা। অতএব গার্হপত্য অগ্নিকে সযত্নে রক্ষা করিত্যুে হইবে। মানবতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতেরা এখানে বলিবেন, অগ্নির মাহাত্ম্য কেবল বেদপন্থী সমাজের