পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 e রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র আপনাকে দিতে পারে না ; কাজেই নিষ্ক্রয়ক্সপে অন্য কিছু দিতে হয়। এই নিষ্ক্রয় ব্যাপারের কথা বেদের অনেক স্থানে অতি স্পষ্ট ভাষায় বলা হইয়াছে। ঐতরেয় ব্রাহ্মণের এক স্থানে আছে, যে যজমান সোমধাগে দীক্ষিত হয়, সে সকল দেবতার নিকটেই আপনার আলস্তনে ( অর্থাৎ আত্মসমর্পণে ) প্রবৃত্ত হয়। সে সকল দেবতার নিকটেই আপনার বদলে পশুকে নিষ্ক্রয় করে। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ নিষ্ক্রয় শব্দটিই স্পষ্ট ভাবে ব্যবহার করিয়াছেন, ইহার তাৎপৰ্য্য হইল যে, ঐ যাগে যে পশু দেওয়া যায়, সেই পশু যজমানেরই প্রতিনিধি । আগেই বলিয়াছি, হবিঃশেষ ভক্ষণ না করিলে কোন যজ্ঞই সম্পূর্ণ হয় না। অগ্নিহোত্র যাগের পর যে দুধ আহুতি দেওয়া হইয়াছে, তাহার শেষাংশ খাইতে হয়। পূর্ণমাসযাগে পুরোডাশের কিয়দংশ যাগের পর খাইতে হয়। পশুযাগেও পশুমাংস খানিকটা খাইতে হয়। সেমিযাগের পূৰ্ব্বে অগ্নি ও সোমকে যে পশু দেওয়া হইত, তাহার মাংস খাওয়া চলিবে কি না, তাহা লইয়া একটা তর্ক উঠিয়াছিল। সংশয়ের একটা কারণ ছিল। এই পশু ত যজমানেরই প্রতিনিধি ; ষজমান আপনার বদলে এই পশু দিতেছেন, তাহা হইলে পশুর মাংস ত নরমাংস ; এই নরমাংস খাওয়া উচিত হইবে কি না ? কোনও কোনও ব্রহ্মবাদী এই আপত্তি তুলিয়াছিলেন। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ সেই আপত্তির খণ্ডন করিতেছেন। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ নিষ্ক্রয় থিয়োরির সমর্থক হইলেও এখানে অগত্যা তাহাকে অন্য থিয়োরির আশ্রয় লইতে হইয়াছে। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ বলিতেছেন, অগ্নির ও সোমের সাহাষ্যে ইন্দ্র বৃত্রবধ করিয়াছিলেন । তিনি বৃত্ৰবধের পর তুষ্ট হইয়া অগ্নি ও সোমকে বর দিয়াছিলেন যে, সোমযাগের পূৰ্ব্বদিন যে পশু দেওয়া হইবে, তাহা তোমরাই পাইবে ইহাই তোমাদের পুরস্কার হইবে । এক নিশ্বাসে নিস্ক্রয় থিয়োরিটা উল্টাইয়া গেল । ঐ পশু দেবতাদের ভক্ষ্য দ্রব্য মাত্র ; উহা নরের প্রতিনিধি নহে ; অতএব উহার মাংস ভক্ষণে কোনও দোষ হইবে না। আসল কথা যে, হবিঃশেষ ভক্ষণ না করিলেই নয়। কেন নয়, সে গুরুতর কথা ; সে প্রসঙ্গ পরে তুলিব। এখন বলিয়া রাখি, ব্রহ্মবাদীদের এই তর্ক শুনিয়া আপনারা হাসিবেন না। সমস্ত খ্ৰীষ্টান ধৰ্ম্ম ঠিক এইরূপ একটা মতের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং ঠিক এইরূপ তর্ক উঠায় খ্ৰীষ্টীয় সমাজ শত সম্প্রদায়ে বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছে । আগেই আপনাদিগকে বলিয়াছি, যীশুখ্ৰীষ্ট একাধারে ষোল আন ঈশ্বর এবং ষোল আন মহিষ । দেবত্ব এবং মানবুত্ব র্তাহাতে মিশিয়া গিয়াছে। তাহার মত পূৰ্ণমমুস্তত্ববিশিষ্ট মানবই যাবতীয় মানবের নিক্রয় ব। প্রতিনিধি হইতে পারে। যজ্ঞে আত্মসমর্পণ ব্যতীত ঈশ্বরের তুষ্টি হইবে না। যজ্ঞে মানুষের আত্মসমর্পণ আবশ্ব্যক। তাই যীশু সমস্ত মানবজাতির নিষ্ক্রয়ক্রপে আত্মসমর্পণ করিলেন। ক্রসে চড়িয়া মৃত্যুই তাহার আত্মসমর্পণ। ক্রসে চড়িবার পূৰ্বরাত্রিতে তিনি আপনার অন্তগত শিয়াদিগকে লইয়া ভোজনে বসিয়াছিলেন, ভোজনের জন্য রুটি আর মদ ছিল ; শিস্যদের প্রত্যেককে একটু করিয়া মদ দিলেন, এবং সেই রুটি ভাঙ্গিয়া প্রত্যেককে বিতরণ করিলেন ; বলিলেন, এই যে রুটি দিলাম, ইহা আমার মাংস ; আর এই যে মদ, ইহা আমার রক্ত । ইহা খাইলেই আমার