পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঋত্বিকদের কর্মের সম্পূর্ণ উপদেশ না থাকায় যজ্ঞের একাংশমাত্র এই ব্ৰাহ্মণে বর্ণিত হয়েছে। বৈদিক যজ্ঞের সম্পূর্ণ বিবরণ ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন ব্রাহ্মণগ্রন্থের মধ্যে। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে মূলতঃ আছে প্রধান ঋত্বিক ও তার সহকারীদের ক্রিয়াকর্মের কথা। এরা ঋক্ৰমন্থের দ্বারা যজ্ঞানুষ্ঠান করতেন ; দেবতা আহবান করতেন, প্রধান ঋত্বিককে বলা হ’ত হোতা। কারণ, দেবভা আহবানে তার ভূমিকাই মুখ্য ছিল। এই হোতা ও তার সহকর্মীদের কথাই ‘ঐতরেয়-ব্রাহ্মণ"-এ প্রাধান্য পেয়েছে। তবে অনেক জায়গায় যজুৰ্বেদীয় ঋত্বিক অধ্বষু ও তার সহকারীদের কথাও এখানে এসে গেছে। আর এসেছে সামবেদীয় ঋত্বিক উদগীতা ও র্তার সহকারীদের কথা। বৈদিক যজ্ঞে হোতা, অধ্বযু ও উদগাতা—এই তিন শ্রেণীর ঋত্বিকের প্রয়োজন হ’ত । অগ্নিষ্ট্রোমাদি যজ্ঞে এর একযোগে নিজ নিজ কাজ করতেন। হোতা পদ্য ও ছন্দোময় ঋকৃমন্ত্রে দেবতার আহবান করতেন । অধ্বষু গদ্যময় যজুর্মন্ত্রে দেবতার উদ্দেশ্যে আহুতি দিতেন। আর উদগীতা সামমন্ত্র গান করতেন। যাগযজ্ঞের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ ও সকল শ্রেণীর ঋত্বিকের কথা ঐতরেয় ব্রাহ্মণ-এ নেই বটে, তবে এ থেকে বৈদিক যজ্ঞের বিপুল ঐশ্বৰ্য-আড়ম্বর ও স্বমহান আদর্শ-চেতনার একটি স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়। এ ছাড়া বৈদিক সাহিত্য ও সংস্কৃতে অনভিজ্ঞ পাঠকদের পক্ষেও এ গ্রন্থ বুঝতে কোন অস্থবিধে হয় না। এ জন্যে অনুবাদক ও টীকাকার রামেন্দ্রন্থন্দর ত্রিবেদীর অবদান বড় কম নয়। সহজ ও প্রাঞ্চল বাংলায় তিনি ঐতরেয় ব্রাহ্মণের অনুবাদ করেছেন। বৈদিক যুগের ধ্যানধারণার স্থদুর্গম বন্ধুর পথে যাত্রা করেও তিনি সাধারণ পাঠকদের কথা ভুলে যাননি । বরং সর্বদা অনুবাদ করেছেন পাঠক-সাধারণের দিকে লক্ষ্য রেখে । কিন্তু তাই বলে অনুবাদ কোথাও হাল্কা বা লঘু হয়ে পড়েনি। আলোচ্য বিষয়ের গাম্ভীর্যের দিকে লক্ষ্য রেখে সর্বত্রই লেখক স্বনির্বাচিত শব্দ ব্যবহার করেছেন। বাক্য যোজনা করেছেন বেদ-ব্ৰাহ্মণের পবিত্রতা এবং আদর্শের দিকে লক্ষ্য রেখে । এককথায় আদর্শদীপ্ত, সংযত বাগভঙ্গী এই অনুবাদকে এক বিশেষ সাহিত্যিক মর্য্যাদায় ভূষিত করেছে। তাই অকপটে বলা চলে, বাংলা অনুবাদ সাহিত্যেও রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর একটি বিশিষ্ট স্থান আছে । মৌলিকতা বা অভিনবত্বের জন্যে নয় ; প্রদীপ্ত দেশপ্রেম, ঐকান্তিক ধর্মপ্রাণতা এবং অপরূপ সাহিত্যিক অভিরুচির জন্যেই র্তার এই অনুবাদ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চিরস্থায়ী আসন লাভের ছাড়পুত্র পেয়েছে। • ঐতরেয় ব্রাহ্মণের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করলে এই উক্তির যথার্থতা নির্ণয় করা সহজ হবে। অবশ্ব ঐতরেয় ব্রাহ্মণের প্রথম দুটি অধ্যায়ের অনুবাদ করেছিলেন পণ্ডিত জয়চন্দ্র সিদ্ধাস্তভূষণ । চার ॥ সম্প্রতি বেদ-চর্চার প্রতি বাঙালীর আগ্রহ ও উদ্দীপনা যথেষ্ট বেড়েছে। সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হবার জন্তে বহু পাঠক আজ বিশেষ ভাবে উৎসুক । এমন দিনে আচার্য রামেজন্বন্দর ত্ৰিবেদীর মঙ্গ-কথা ও ঐতরেয় ব্রাহ্মণের অম্বুবাদ সংস্কৃতান্নুরাগী স্বধীদের আমুকুল্য লাভ করবে, আশা করি । * বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য