Σ. σ. 8 রামেন্দ্রক্ষনার রচনাসমগ্র বিতণ্ডায় যোগ দিয়াছেন, তাহাদের উক্তির তাৎপৰ্য্য গ্রহণ করিলেই বোধ হইবে, ইহার কোন মূল নাই। সাহিত্য-পরিষদে উত্থাপিত মূল প্রস্তাবে সকলেই একমত ; একমত না হইয়া উপায় নাই। অথচ সম্পূর্ণ ঐকমত্য সত্ত্বেও অবাস্তর প্রসঙ্গ বহু পরিমাণে উপস্থিত হইয়া একটা কোলাহলের সৃষ্টি করিয়াছে। ইহা আশ্চর্য্যের বিষয়, কিন্তু শাস্ত্রীয় বিতণ্ডায় বুঝি ইহাই সনাতন নিয়ম। আমাদের সাহিত্য-সমাজের সুধীগণ স্থূলতঃ দুই পক্ষ অবলম্বন করিয়া দাডাইয়াছেন। এক পক্ষ সংস্কৃত ভাষার প্রতি অন্তরাণী ; তাহারা সাহিত্যের ভাষায় ও লৌকিক ভাযায় পার্থক্য বজায় রাখিতে, এমন কি, সেই পার্থক্য বাড়াইতে চাহেন। লৌকিক ভাষাকে তাহারা কতকটা কৃপার ও অবজ্ঞার চক্ষে দেখেন : লৌকিক ভাষা নইলে সংসারযাত্রা চলে না, তাই লৌকিক ভাষাটা চলুক। কিন্তু সাহিত্য তাহার আক্রমণ হইতে উৰ্দ্ধে অবস্থান করুক, ইহাই তাহাদের অভিপ্রেত। লৌকিক ভাষাটা গৃহকৰ্ম্মে ও সংসারযাত্রায় আবখ্যক হইলেও সাহিত্যক্ষেত্রে উহাকে প্রশ্রয় দিতে নাই। সে সকল থাটি বাঙ্গাল শব্দ লৌকিক ভাষার সম্পত্তি, উহা সংস্কৃতমূলক হউক আর দেশজই হউক, উহাদের যথাসাধ্য বর্জন কর, নতুবা সাহিত্যের ভাষা সাধু ভাষা হইবে না। অপর পক্ষ সাহিত্যের ভাষা ও লৌকিক ভাষার মধ্যে এই পার্থক্য রাখিতে চাহেন না। ইহার সংস্কৃত-শব্দ-বহুল বাঙ্গালা ভাষার প্রতি বিরূপ। ইহাদের প্রধান যুক্তি যে, ভাষার উদ্দেশুই যখন লোকশিক্ষা, তখন যে ভাষায় লোকশিক্ষা সুচারুরূপে সাধিত হয়, তাহাই সার্থক ভাষা। যে ভাষা কেবল পণ্ডিতেই বুঝিবে, আর মূর্থে বুঝিবে না, সে ভাষার অস্তিত্ব অজাগলসনের ন্যায় নিরর্থক। কাজেই সাহিত্যের জন্য একটা দুৰ্ব্বোধ্য ভাষা এবং দৈনিক ব্যবহারের জন্য আর একটা স্ববোধ্য ভাষা, এই দুই ভাষা বাখিবার দরকার নাই । উভয় পক্ষের যুক্তিতেই কিছু না-কিছু সত্য আছে , এব’ বোধ করি, উভয় পক্ষ ত্যাগ করিয়া মধ্যপথ অবলম্বন করিলেই শ্ৰেয়ঃ হইতে পারে। বাঙ্গাল সাহিত্যের ইতিহাসই কতকটা এইরূপ মধ্যপথ অবলম্বনের সমর্থক । প্রাচীন সাহিত্য সাধারণ লোকের জন্য লিখিত হইয়াছিল, সন্দেহ নাই। চণ্ডীদাস ও কুক্তিবাস ও রামপ্রসাদ সৰ্ব্বসাধরণের জন্যই তাহাদের কবিতা রচনা করিয়াছিলেন । বিশাল বৈষ্ণব-সাহিত্যও সৰ্ব্বসাধারণের জন্যই লিখিত হইয়াছিল। সে-কালের পণ্ডিতেরা সংস্কৃত-সাহিত্যের মাহাষ্ম্যে মুগ্ধ ছিলেন , প্রাকৃত ভাষার প্রতি র্তাহাদের বিরূপ থাকা আশ্চT্যেব বিষয় নহে। তাহার। বাঙ্গাল স্পর্শ করিতেন না। কিন্তু র্যাহারা বাঙ্গাল লিখিতেন, তাহারা সাধারণের জন্যই লিখিতেন, এবং সরল লৌকিক ভাষাতেই যথাসাধ্য লিখিতেন। প্রাদেশিক শ্রোতার ও পাঠকের জন্য লিখিত হইত বলিয়া উহা প্রাদেশিকত্ববজ্জিতও হইত না । ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের ছাত্রদের জন্য প্রাদেশিকত্ববর্জিত সাধু বাঙ্গালা পুস্তকের প্রয়োজন হইয়াছিল। যে সকল সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত এই সময়ে বাঙ্গালা রচনার ভার লইয়াছিলেন, তাহারা সংস্কৃত শব্দের বহুল প্রয়োগ দ্বারা একটা নূতন ভাষারই যেন স্বষ্টি করিয়া ফেলিলেন। উহা সাধু ভাষা হইল বটে ও সৰ্ব্বতোভাবে
পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১০৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।