পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শবকথা : বাঙ্গালা ব্যাকরণ > * > বিচারেরও প্রথা আছে । যে শব্দের অর্থ সকলেই জানে, সে শব্দের উৎপত্তি কোথা হইতে কিরূপে হইল, তাহা সকলে না জানিতে পারে। চতুর্থত:, অভিধানের আবও একটা মহত্তব উদ্দেশ্য আছে। ভাষার সর্বাঙ্গে বিশ্বেযণ ও ব্যবচ্ছেদ না করিলে ভাষার প্রকৃতি ও গঠন সম্বন্ধে তথ্য নির্ণয় অসম্ভব । এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য শব্দবাশিব সঙ্কলন আবশ্যক। লোকসংখ্যাকম্মে বা সেনসাস ব্যপারে যেরূপ রাজাধিবাজ হইতে ভিক্ষুক পৰ্য্যন্ত মহুয্য মাত্রেরই একই মূল্য, রাজচক্রবর্তীকেও যেমন এক জন লোক বলিয়াই ধবা যায় ও লোকগণনার তালিকায় তিনি তাহার অধিক স্থান পান না, এখানেও সেইরূপ। বৈজ্ঞানিক হিসাবে সকল শব্দেবই সমান আদর। কাজেই বাঙ্গালা সাহিত্য নামে পরিচিত সমস্ত সাহিত্যে খাটি সংস্কৃত ও খাটি বাঙ্গালা যত শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে, তাহাদের সকলেরই সঙ্কলন আবশুক ; সকলই বাঙ্গালা ভাষার অঙ্গীভূর্ত। অর্থবিচার ও ব্যুৎপত্তি বচাবকালে অপক্ষপাতে সকলকেই গ্রহণ করিতে হইবে। সম্পূর্ণ তালিকাসঙ্কলন অসাধ্য ব্যাপার ; তবে যথাসাধ্য সম্পূর্ণতার জন্য চেষ্টা করিতে হইবে। কোন শব্দকেই বজ্জন করিলে চলিবে না । সকলেরই আদর সমান। মাইকেল অনেক খাটি সংস্কৃত শব ব্যবহাব করিয়া গিয়াছেন ; তাহার পূর্বে কেহই তাহার ব্যবহার কবেন নাই, তাহার পবেও কেহ ব্যবহারে সাহসী হন নাই । ইরম্মদ’ ও ‘মহেশ্বাস’ শবেব অর্থ কি, প্রশ্ন করিলে অনেককেই স্থিরনেত্র হইতে হইবে । কিন্তু কি করা যাইবে ! মাইকেল যখন মেঘনাদবধে তাহাদের ব্যবহার করিয়াছেন, এবং মেঘনাদবধের নাম বাঙ্গালা বহির তালিকা হইতে উঠাইতেও যখন আমরা সম্মত নহি, এবং ভবিষ্যতেও অপর কোন লেখক কর্তৃক ঐ ঐ শব্দের প্রয়োগ নিবারণের জন্য আমরা কোন আইনই খাটাইতে পারিব না, তখন ঐ দুই শব্দকে বাঙ্গালা ভাষায় গৃহীত খাটি সংস্কৃত শব্দস্বরূপে বাঙ্গালা অভিধানে স্থান দিতেই হইবে। সেইরূপ প্রাচীন কিংবা আধুনিক কোন লেখক যদি কোন বাঙ্গালা পুস্তকে "গলদ’ ও ‘বলদ’ ও ‘গতর’ শব্দের ব্যবহার করিয়া ভাষাকে কলঙ্কিত করিয়াই থাকেন, তাহার এই সাধুবিগহিত কাৰ্য্য যতই নিন্দনীয় হউক না, ঐ কয়টি গ্রাম্য শব্দকে অভিধানে স্থান না দিলে উপায় নাই । বাঙ্গালা ভাষায় এইরূপ একখানি সম্পূর্ণ অভিধান সঙ্কলিত না হইলে বলিতে পারা যাইবে না যে, কোন শ্রেণীর শব্দের সংখ্যা আমাদের সাহিত্যের ভাষায় অধিক । ফলে বিশুদ্ধ শব্দ লইয়। এইরূপ কথা-কাটাকাট যুগ ব্যাপিয়া চালান যাইতে পারে । বিশুদ্ধ’ শব্দটা উভয় পক্ষ এক অর্থে প্রয়োগ করেন না। আপন আপন অর্থে উভয় পক্ষই ঠিক। বিবাদের হেতু না থাকিলেও বিবাদ চালান যায়। আমি ‘বিশুদ্ধ' শব্দটাকেই বর্জন করিয়া খাটি’ শব ব্যবহার করিব । আশা করি, খাট’ শবটির অবিশুদ্ধির জন্য পণ্ডিতেরা আমাকে ক্ষমা করিবেন।