পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ o 8 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র হইতে আমরা কোন উপকারই পাই নাই, এ কথা পুরা দমে বলিতে পারিব না । পাশ্চাত্য শিক্ষা হইতে কিছু লাভ করিয়াছি সত্য, কিন্তু পাশ্চাত্য শিক্ষা আমাদের সকলকেই অল্পবিস্তর মুগ্ধ ও অভিভূত করিয়াছিল, ইহাও ততোধিক সত্য। বঙ্কিমচন্দ্রের জীবনেতিহাস র্যাহার অবগত আছেন, তাহারা জানেন, বঙ্কিমচন্দ্রও এই আক্রমণ হইতে নিস্তার পান নাই । তবে বঙ্কিমের সহিত অন্তোব এ বিষয়ে প্রভেদ আছে। নীর বর্জন কবিয় ক্ষীর গ্রহণের ক্ষমতা এক রাজহাসেরই আছে। বঙ্কিমচন্দ্ররূপী রাজহংস পাশ্চাত্য-নীর হইতে যে পরিমাণ ক্ষীর সংগ্ৰহ করিয়া স্বজাতিকে উপহার দিয়াছেন, আমাদেব মত দাডকাকের দ্বার ততটার সম্ভাবনা নাই । বঙ্কিমচন্দ্রের মাহাত্ম্য এই যে, তিনি কেবল ক্ষার সংগ্ৰহ করিয়াই নিরস্ত হন নাই, তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার আকর্ষণ ও মোহপাশ সবলে ছিন্ন করিয়! ডঙ্ক বাজাইয় আপন ঘরে ফিরিয়াছিলেন ও মাতৃমন্দিরে আনন্দমঠের প্রতিষ্ঠা কবিয়া আমাদিগকে তাহার ভিতর আহবান করিয়াছিলেন। 'বঙ্গদর্শনের বঙ্কিমচন্দ্র পাশ্চাত্য শিক্ষার মোহবন্ধন সম্পূর্ণ কাটাইয়াছিলেন কি না, বলিতে পারি না, কিন্তু ‘প্রচারে’র পশ্চাতে যে বঙ্কিমচন্দ্র দাড়াইয়াছিলেন, তাহাকে রাহুগ্রাসমুক্ত পূর্ণচন্দ্রের মত দীপ্তিমান দেখি । তিনি তখন গীতার উক্তির আশ্রয় লইয়া স্বদেশবাসীকে ভয়াবহ পরধৰ্ম্ম হইতে স্বধৰ্ম্মে প্রত্যাবৃত্ত হইতে আহবান করিতেছিলেন । ভয়াবহ অভিধান দিয়া পরধৰ্ম্মকে নিন্দ করা আমার অভিপ্রেত নহে ; ধৰ্ম্মের একটা সাৰ্ব্বভৌমিক এবং সনাতন অংশ আছে, তাহা সকল ধৰ্ম্মেই সমান , সে অংশটুকুতে কাহারও ভীত হইবার কোন কারণ নাই , কিন্তু ধৰ্ম্মের আর একটা অংশ আছে, তাহা দেশভেদে ও কালভেদে মূৰ্ত্ত্যন্তর গ্রহণ করে । ধৰ্ম্ম যখন লোকস্থিতির সহায়, এবং লোকস্থিতির নিয়ম ধখন বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন কালে বিভিন্ন, তখন ধৰ্ম্মের এই অংশ দেশ-কালের অপেক্ষ না করিয়া থাকিতে পারে না। কোন দেশেই মানব-সমাজের অবস্থা চিরদিন সমান থাকে না। একটা মানব-সমাজ পাশ্ববর্তী মানব-সমাজের সংস্পর্শে বা সংঘর্ষে আসিয়া তাহার সমাজব্যবস্থা পরিবতিত করিতে বাধ্য হয়। কাজেই ধৰ্ম্মের এই অংশ দেশকালাতুরূপ না হইলে উহ। তদ্দেশে ও তৎকালে লোকস্থিতির অনুকূল হয় না। তওৎদেশে ধর্মের এই অংশের সহিত তত্তৎদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ। প্রাচীনের সহিত সম্পর্ক একেবারে বিচ্ছিন্ন করিলে কোন সামাজিক ব্যবস্থাই কোন দেশে লোকস্থিতির অল্পকূল হয় না। যখন বিভিন্ন সমাজের ইতিহাস বিভিন্ন পথে চলিয়াছে, তখন লোকস্থিতির অনুরোধে ধৰ্ম্মকেও আত্মসমাজের অনুকূল মুভি গ্রহণ করিতে হয়। এইখানেই আত্মধৰ্ম্ম ও পরধৰ্ম্মে ভেদ আসিয়া পড়ে। যে ধৰ্ম্ম এক সমাজে লোকস্থিতির অনুকূল, সে ধৰ্ম্ম অন্য সমাজে অকুকুল না হইতে পারে। এইখানে এ কথাটা মনে রাথিতে হইবে ষে, ধৰ্ম্ম শব্দের লক্ষ্য কেবল রিলিজন নহে। আমাদের শাস্ত্রে ধৰ্ম্ম শব্দের সংজ্ঞ আরও ব্যাপক ; মাচুষের অতুষ্ঠেয় প্রত্যেক কৰ্ম্ম,—দাতন-কাঠির ব্যবহার হইতে ঈশ্বরোপাসনা পৰ্য্যস্ত সমস্ত ধর্মেরই অন্তভূক্ত। এই হিসাবে যাহা বিদেশীর ধৰ্ম্ম, তাহা ভারতবাসীর ধর্শ্ব হইতেই পারে না। ইয়ুরোপের প্রাচীন ইতিহাস ও ইয়ুরোপের আধুনিক সমাজতন্ত্র যখন ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস ও ভারতবর্ষের আধুনিক