পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা : হর্মান হেলমহোলৎজ २७6* সুন্দর বোধে ও আবশ্বক বোধে গ্রহণ ও কতক অনাবশ্বক বোধে ত্যাগ করিয়া জীবনের স্থিতি, গতি, পুষ্টি ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বিধানে নিরত থাকে। বাহিরে কিরূপ আনাগোনা আন্দোলন চলিতেছে, ইহা জডবিজ্ঞান বা পদার্থবিদ্যার বিষয় , ইন্দ্রিয়গণ কিরূপে এই সকল আন্দোলনের বাৰ্ত্ত মস্তিষ্কে হাজির করে, ইহা জীববিদ্যা ও শরীরবিদ্যার বিষয় , এবং অন্তঃকরণ সেই বাৰ্ত্তাগুলি বা সঙ্কেতগুলিকে কিরূপে গোছাইয়া ও সাজাইয়া সেই উপাদানসকলে বিশ্বজগৎ নিৰ্ম্মণ করিতে বসে তাহ মনোবিজ্ঞানের বিষয়। স্থূলতঃ এই তিন ছাড়িয়া আর কোনও বিজ্ঞান নাই | পণ্ডিতগণের মধ্যে এক এক ব্যক্তি ইহার একটি মাত্র অথবা একটিরই কোন সঙ্কীণ অংশ মাত্র লইয়া ব্যাপৃত থাকেন। জ্ঞান-সাম্রাজ্যের তিন মহাদেশে একই সময়ে দিগ্বিজয়ে বাহির হইতে পারেন, হেলমহোলৎজ এইরূপ কুতকৰ্ম্ম পুরুষ ছিলেন , বোধ করি, এ বিষয়ে তিনি তাৎকালিক মনুষ্যমধ্যে অদ্বিতীয় ছিলেন। প্রতি ও দৃষ্ট ইন্দ্রয়গণের মধুে সৰ্ব্বপ্রধান , স্থখতায় অথবা প্রভাবে অন্য ইঞ্জিয় এই উভয়ের সমকক্ষ নহে। প্রধানতঃ শ্রুতি ও দৃষ্টি অবলম্বন করিয়াই আমরা এই বিচিত্র সুন্দর জগৎ নিৰ্ম্মাণ করিয়া লইয়াছি। অন্যান্য ইন্দ্রিয় ইহীদের সাহায্য করে মাত্র । এই দুই ইন্দ্রিয়, ইহাদের গঠন, ইহাদের বিষয় ও ইহাদের ক্রিয়। এ সম্বন্ধে আলোচনায় তিনি যাহা করিয়াছেন, তাহ অপর কেহ করে নাই। জড জগতের সহিত আমাদের অন্তজগতের এমন কি সম্বন্ধ আছে যে, কতকগুলি জিনিষকে আমরা স্বন্দর দেখি, কতকগুলিকে কুৎসিত দেখি ? আমাদের এই সৌন্দৰ্য্যবোধের মূল কি ? এই সৌন্দর্য্যবোধ কোথা হইতে আইসে ? এই গভীর তত্ত্বের মীমাংসার জন্য মানব বহু দিন হইতে লালায়িত। সৌন্দৰ্য্যতত্ত্বের মীমাংস৷ এক হেলমহোলৎজ হইতে যত দূর অগ্রসর হইয়াছে, অন্য কোন ব্যক্তি হইতে তাহা হয় নাই। হেলমহোলৎজক্ট প্রকৃতপক্ষে আধুনিক মনস্তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা । জডের সহিত মনের কি সম্বন্ধ, এই গভীর সমস্তার মীমাংসার জন্য মনোবিজ্ঞানশাস্থের উৎপত্তি ও বিকাশ। যে পথে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাইবে, হেলমহোলৎজই তাহ দেখাইয়াছেন। ১৮৪৭ সালে ভৌতিক শক্তির অনশ্বরতা সম্বন্ধে হেলমহোলৎজের বিখ্যাত প্রবন্ধ প্রকটিত হয়। তাহার পর পদার্থবিদ্যা রূপান্তর পরিগ্রহ করিয়াছে। একটা স্ন-কৌশল যন্ত্র বানাইয়া দিলে উহা বিনা শ্রমে বিন ব্যয়ে চিরদিন ধরিয়া চলিতে পারবে ও কাজ দিবে, সে কালের লোকের এইরূপ বিশ্বাস ছিল । এখনও যে এই বিশ্বাসের ধারা অন্তঃসলিল প্রবাহের ন্যায় বহিতেছে না, এমন নহে। জডের স্বষ্টি নাই, বিনাশও নাই, এই তত্ত্ব কিছু দিন পূৰ্ব্বে রসায়নবিজ্ঞানের জন্মদাতা লাবোয়াশিয়ে কর্তৃক নির্ণীত হইয়াছিল ; কিন্তু শক্তিরও যে স্তষ্টি নাই, বিনাশও নাই, এ তত্ত্ব তখনও আবিষ্কৃত হয় নাই । অভাৰ হইতে ভাবের উৎপত্তি হয় না, সং অসতে পরিণত হয় না, এইরূপ একটা বাক্য দার্শনিকগণের মধ্যে প্রচলিত ছিল বটে ; কিন্তু ইহার পক্ষে বা বিপক্ষে কোনও প্রমাণ ছিল না ; এবং এই স্বতঃসিদ্ধ হইতে কি সিদ্ধান্ত হয় বা না হয়, তাহারও কেহ ধ্রুব নির্দেশে সাহস করিতেন না। শক্তির বহুরূপিতা হেলমহোলৎজের কিছু দিন পূর্বেই বৈজ্ঞানিকগণের মধ্যে স্বাকৃত হইতে আরম্ভ হইয়াছিল। কিন্তু শক্তির অনশ্বরতাকে একটি বৈজ্ঞানিক সত্যরূপে প্রতিপাদনের কার্য্য হেলমহোলৎজেরই