পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e/হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় হেমচন্দ্রের ভেরী নীরব হইয়াছে , আশা করি, বঙ্গসাহিত্যে উহার প্রতিধ্বনি নীরব হইবে না। মধুস্থদনের অপমৃত্যু নিবাবণে তদানীন্তন বঙ্গসমাজ ষত্ব করে নাই। স্মৃতিরক্ষা দূবের কথা। মধুস্থদনের মৃত্যুতে বঙ্গসমাজ কবিমুখে রোদন করিয়াছিল মাত্র , তদানীন্তন বঙ্গসাহিত্যের পরিচালক 'বঙ্গদর্শন" উহাই বঙ্গসমাজের পক্ষে শুভ লক্ষণ মনে কবিযাছিলেন। হেমচন্দ্র স্বযং সেই রোদনগীতি গাহিয়াছিলেন । চক্রনেমির অনুকরণে হেমচন্দ্রেবও দশাবিপৰ্য্যয় ঘটিয়াছিল। ইদানীন্তন বঙ্গসমাজ তাহার প্রতিকারে কিঞ্চিং চেষ্টা করিয়াছিল। হেমচন্দ্রেব স্মৃতিরক্ষা বিষয়েও বঙ্গসমাজ একেবাবে নিশ্চেষ্ট নাই । ইহাকেও শুভ লক্ষণ মনে করা যাইতে পারে । হেমচন্দ্রকে আমবা মূখ্যতঃ জাতীয় ভােব উদ্বোধনের কবি বলিয়া জানি। তাহার পূৰ্ব্বে কেহ ভাবতবিলাপ গায় নাই। তাহাব পূৰ্ব্বে কেহ ‘ভারত কেবল ঘুমায়ে রয়’ বলিয়া করুণ স্বরে ডাকে নাই। র্তাহার পূৰ্ব্বে কেহ ভারতকে জননী সম্বোধনে ডাকিয়াছিল কি ন জানি না। তিনি যে স্রোত প্রবাহিত করিয়াছিলেন, তাঙ্গার পবে সেই স্রোত একটানে বহিয়াছে। তাহার পরে বঙ্গের পুণ্যকীৰ্ত্তি সন্তানের মুখে আমবা বন্দে মাতরম্ গীতি শুনিয়াছি। তাহার পরে বঙ্গের অন্ততর মনীষী সন্তান ভগ্নকণ্ঠে একবার তোরা মা বলিয়া ডাক বলিয়া আমাদিগকে আহবান কবিয়াছেন–কিন্তু হায়, আমাদের নিদ্রা এখনও ভাঙ্গে নাই। ভাঙ্গিবে কি না, তাহ জানি না । আমাদের বর্তমান অস্বাভাবিক নিদ্রাদশায় সামাজিক ব্যাধির প্রতিকারকল্পে জাতীয় ভাবের উদ্বোধনই একমাত্ৰ মহৌষধ বলিয়া আমরা জানি। রাজনীতি, শিল্প, বিজ্ঞান, সাহিত্য, লোকশিক্ষা, এ সকলেরই সেই এক উদ্দেশ্বের অভিমুখে গতি হওয়া আবশ্বক বলিয়া বোধ করি। নতুবা সব মিছা অভিনয়,–ভুয় বাজি । নতুবা বিশ্ববিদ্যালয়, মুদ্রাযন্ত্র, রেলওয়ে, কংগ্রেস, শিল্পমেলা, সাহিত্য-পরিষৎ বঙ্কিমচন্দ্র, হেমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, জগদীশচন্দ্র, সমস্তই জলের বুদ্ধ,দ-চিহ্ন না রাখিয়া জলে মিশাইবে। বুত্রসংহার দশমহাবিদ্যা বিস্মৃতির কুক্ষিতে মিশিয়া গেলেও ক্ষতি হইবে না। হেমচন্দ্রের ভেরীর প্রতিধ্বনি যেন থামিয়া না যায়। হেমচন্দ্র এখন নাই । হেমচন্দ্রের ভেরী অক্ষয় হউক । ( 'সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা’, ১ম সংখ্যা, ১৩১০ ) গৌরীমঙ্গল জেলা মুর্শিদাবাদের অন্তর্গত জেমোর রাজবাটীতে গৌরীমঙ্গল নামক একখানি পুথি দেখিলাম। বাঙ্গালা সাহিত্যে বিবিধ "মঙ্গল”গ্রন্থ প্রচারিত হইয়াছে ; কিন্তু গৌরীমঙ্গল বোধ করি, বাঙ্গালী পাঠকের এ পর্যন্ত অপরিচিত। এই প্রবন্ধে উক্ত গ্রন্থের কিঞ্চিং বিবরণ দেওয়া যাইতেছে ।