পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধন্ত্রবদ্ধ শিক্ষাপ্রণালী १S হইয়াছে বলিলে সত্যকে অকারণে সঙ্কীর্ণ করা হয় । যে মায়া হইতে এই বিশ্বজগতের অভিব্যক্তি, যে মায়ার নাম অবিদ্যা বা অজ্ঞান, মানবের অন্তর্দেহে প্রভুত্বপ্রার্থী এই পাপপুরুষ তাহারই মূৰ্ত্তিভেদ মাত্র। মানবের উপর তাহার এই দৌরাত্ম্য, বৰ্ত্তমান জগৎপ্রণালীরই একটা অঙ্গ মাত্র । এই যে সত্য, ইহা চিরন্তন সত্য, ইহা অনাদি সত্য, ইহা চিরকাল আছে, ইহার একটা দিক মূৰ্ত্তি গ্রহণ করিয়া সেক্সপীয়ারের সমীপে প্রতিভাত হইয়াছিল ; ইহা শব্দরূপে, ছন্দোবদ্ধ বাক্যরূপে তাহার কর্ণে ধ্বনিত হইয়াছিল। কাজেই সে কালের ভাষায় বলিতে পারি, সেক্সপীয়ার কেবল কবি নহেন, তিনি এই ছন্দোময় বাক্যের দ্রষ্টা,—তিনি ঋষি । অথবা ধর, সার আইজাক নিউটন। আপেল ফল চিরদিনই ভূকেন্দ্রের অভিমুখে পতনোন্মুখ । চন্দ্র যেমন ভূকেন্দ্রের মুখে পতনোন্মুখ—গ্ৰহগণ যেমন সূর্য্যের মুখে পতনোন্মুখ ;–এই পতনোন্মুখত চিরদিনই আছে। নীহারিক অথবা উস্কামালা জমাট বাধিয়া সৌর জগৎ অথবা তদ্বিধ নানা জগংকে অভিব্যক্ত করিয়াছে ; তাহার প্রত্যেক কণিকাতে এই পতনোন্মুখত বৰ্ত্তমান ছিল ; কবে হইতে বর্তমান ছিল ; তাহা কে জানে ? ইহা সনাতন সত্য—প্রত্যেক মহুষ্যের চোগের সামনে এই সত্য উপস্থিত ছিল। সকলের সাধন সমান নহে, ইতর মনুষ্য চক্ষু: সত্ত্বে অন্ধ। নিউটন চক্ষুষ্মান ছিলেন–র্তাহার সমীপে এই অশরীরী সত্য মূৰ্ত্তি গ্রহণ করিয়া দেখা দিল, র্তাহার কর্ণে ইহা ধ্বনিত হইল—তিনি যাহা দেগিলেন এবং শুনিলেন, ইতর সাধারণকে তাহা জানাইলেন। মাধ্যাকর্ষণঘটিত মন্ত্রের তিনি ঋষি । যাক, প্রাচীন বেদপন্থী আৰ্য্যসমাজে আবহমান কাল হইতে যে বিদ্যা পুঞ্জীভূত হইয়৷ সনাতন বাণী বলিয়া গৃহীত হইত, তাহার রক্ষাকৰ্ম্ম প্রত্যেক সামাজিকের অবশ্য প্রতিপাল্য ধৰ্ম্ম বলিয়া গৃহীত হইত। এখানে কোনরূপ বিচার বিতর্ক, কোন স্ববিধ অসুবিধা বিবেচনার অবসর মাত্র ছিল না । কোনরূপ ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রশ্ন উঠবারই অবসর ছিল না । বিদ্যালাভের উদ্দেশ্য কি, ইহার উদ্দেশ্য স্বার্থসাধন, কি পরার্থ সাধন ইহার উদ্দেশ্য চরিত্রগঠন, জীবন-সংগ্রামে সামর্থ্যলাভ বা রাষ্ট্রীয় বলবিধান, এই সকল প্রশ্ন উঠিবার কোনই অবসর ছিল না। প্রত্যেক সামাজিককে এই বিদ্যা গ্রহণ করিতেই হইবে, নতুবা তাহার মানব জন্ম সম্পূর্ণ হইবে না বা সার্থক হইবে না। এই বিদ্যা যে গ্রহণ করে, তাহার দ্বিতীয় জন্ম হয় ; এই দ্বিতীয় জন্ম, গৌরবে প্রাকৃতিক জন্মের তুলনায় হীন নহে । এ কালে যাহাকে নিম্নশিক্ষা বলে, জীবন-সংগ্রামে কিঞ্চিৎ সামর্থ্য লাভের জন্ত তাহ প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষে অত্যাবশ্যক। অনেক দেশে রাজদণ্ডপ্রয়োগে ইহা প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রহণ করাইবার ব্যবস্থা হইয়াছে ; এ দেশেও কথাটার কল্পন জল্পনা হইতেছে । কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তিকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বাধ্য করিবার কল্পনা কোন দেশেই হয় নাই। প্রাচীন ভারতবর্ষে যাহা উচ্চতম শিক্ষা বলিয়া গৃহীত হইত, তাহা গ্রহণ করিতে প্রত্যেকেই বাধ্য ছিল, কিন্তু এই বাধ্যতা স্থাপনের জন্য কোনরূপ রাজব্যবস্থার, কোনরূপ রাজদণ্ড প্রয়োগের প্রয়োজন হয় নাই। এই ব্যবস্থাকে যন্ত্রবদ্ধ করিবার কোন প্রয়োজন হয় নাই। যথাকালে আচার্য্যের নিকট উপনীত হইয়া ব্রহ্মচৰ্য্য করিতেই হইবে, ইহা সকলেই যেন একবাক্যে মানিয়া লইয়াছিল। সনাতনী বাণী, সমুদায় সমাজতন্ত্র র্যাহার