পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૨ রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রভুত্বের অধীন, তাহাকে যথাশক্তি রক্ষা করিতেই হইবে, নতুবা প্রত্যবায় হইবে, ইহ প্রত্যেক সামাজিক নিবিববাদে, বিনা বিচারে স্বীকার করিয়া লইয়াছিল। এ বিষয়ে দ্বিজাতি মাত্রেরই—ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, প্রত্যেক বর্ণেরই অর্থাৎ তাৎকালিক আৰ্য্যসমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিরই সমান অধিকার—সে বিষয় কোনরূপ মতদ্বৈধ ছিল না। কেন না, ইহা একটা ঋণ ; মনুষ্য ভূমিষ্ঠ হইবা মাত্র এই ঋণের বোঝা মাথায় লইয়৷ জন্মগ্রহণ করিয়াছে। মাতুষের নানা ঋণ আছে। দেবতাগণের নিকট ঋণ আছে ; মনুষ্যের শুভাশুভ, অথবা শুভাশুভের যে অংশ আপনার আয়ত্ত নহে, দেবতারা তাহার নিয়ন্ত,ত্ব করেন ; অতএব দেবতাগণের নিকট ঋণ আছে। পিতৃগণের নিকট ঋণ আছে ; কেন না, মানুষের যাহা লইয়া মনুষ্যত্ব, তাহ পিতৃপুণ্যে অর্জিত, পিতৃপুরুষপরম্পরার নিকট হইতে তাহা সে উত্তরাধিকারস্থত্রে প্রাপ্ত হইয়াছে ; অতএব পিতৃগণের নিকট ঋণ আছে। মল্লযুগণের নিকট ঋণ আছে, কেন না, মন্ত্যু যখন সমাজবদ্ধ, যখন একের হাত ধরিয়া অন্যকে চলিতে হয়, তখন প্রত্যেক মন্ত্য অপর মন্তস্থ্যের ঋণী । যাবতীয় ভূতগণের নিকট ঋণ আছে ; কেন না, পশু পক্ষী, তরু লতা, নদী পৰ্ব্বত, সকলেই মানবজীবনের কল্যাণে কিছু না কিছু আনুকুল্য করে। কিন্তু সকল ঋণের উপর ঋষিগণের নিকট ঋণ, কেন না যে সত্যের উপর বিশ্বজগৎ প্রতিষ্ঠিত, যে সত্যের বলে বিশ্বজগৎ চলিতেছে, সেই সত্যের মুক্তি তাহারা প্রত্যক্ষ করিয়াছেন, সেই সত্যকে তাহারা আবিষ্কার করিয়াছেন, সেই সত্যকে তাহারা সনাতনী বাণী দ্বারা প্রকাশ ও প্রচার করিয়াছেন ; সেই সনাতনী বাণী মন্তস্থ্যের নিকট অভয় ঘোষণা করিতেছে, সেই বাণী মৰ্ত্ত্য জগতে অমরত্বের ভরসা আনিতেছে ; আর সমুদয় তুচ্ছ—সেই বাণীই পরম পদার্থ। সেই বাণীকে পূজা করিতেই হইবে। ঋষিগণ মুক্তহস্তে যে অভয়বাণী বিতরণ করিয়া গিয়াছেন, তাহাকে অঞ্জলি পাতিয়া গ্রহণ করিতেই হইবে । এই ঋষিগণের নিকট এই কারণে সকলেই ঋণী । এই ঋণমোচনে সকলের সমান অধিকার, এই ঋণমোচনের অবসর পাইলে মানবজীবন ধন্য হয়, পূর্ণ হয়—ইহাতে বিচার বিতর্কের অবসর নাই। মাথা পাতিয়া এই ঋণ গ্রহণ করিয়া জীবনকে ধন্য করিতে হইবেই। ঋষিগণ অন্ত প্রতিদান চাহেন না , তাহারা চাহেন এই যে, তাহদের দত্ত দান সাদরে গৃহীত হউক, রক্ষিত হউক, পূজিত হউক। এই ঋণমোচনের অধিকার দ্বিজাতিসমাজে প্রত্যেকেই অকুষ্ঠিতভাবে অঙ্গীকার করিয়াছেন। যথাকালে আচাৰ্য্যগৃহে উপনীত হইয়া যথাশক্তি ব্রহ্মচৰ্য্য পালন করিলে গৃহস্থাশ্রমে প্রবেশের অধিকার জন্মিত। গৃহস্থাশ্রমে প্রবেশ করিয়াও যাবজ্জীবন ব্রহ্ম অভ্যাস করিতে হইত—কেন না, ব্রহ্ম অভ্যাস মহাযজ্ঞ, এই যজ্ঞের অনুষ্ঠান অবশ্য কৰ্ত্তব্য—ইহার অনুষ্ঠানে কোন স্বার্থসিদ্ধির আশা নাই, ইহার অকরণে প্রত্যবায় আছে। অতএব যে আর্য্যসমাজে জন্মগ্রহণ করিয়া ব্রহ্মাভ্যাসে অধিকার লাভ করিয়াছে, তাহাকে যাবজ্জীবন এই যজ্ঞ সম্পাদন করিতে হইত। গৃহীর অমৃষ্ঠেয় সৰ্ব্বমহাযজ্ঞের মধ্যে এই যজ্ঞের স্থান সকলের উপর। দেবোদেশে দ্রব্যত্যাগের নাম যজ্ঞ । এই যজ্ঞের দেবতা সত্য ; এই যজ্ঞের দেবতা ব্রহ্ম। গৃহস্থের জীবন এখানে সেই দ্রব্য, ফলকামনা সৰ্ব্বতেভাবে পরিত্যাগ করিয়া যাহা সেই দেবতার উদ্দেশে অর্পণ করিতে হইবে। ইহাতে কোনরূপ স্বাতন্ত্র্য পারতন্ত্র্যের কথা উঠে না । ইহাতে কি লাভ হইবে, তাহা জানার প্রয়োজন নাই। ব্যক্তিগত হিত হইবে বা রাষ্ট্রগত হিত হইবে, সে বিতর্কের কোন