পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যন্ত্রবদ্ধ শিক্ষাপ্রণালী . 設や প্রয়োজন নাই। জীবন সংগ্রামে জয় হইবে বা পরাজয় হইবে, সে তুচ্ছ কথার আলোচনার কোন প্রয়োজন নাই। - _ ভারতবর্ষের প্রাচীন সমাজে বিদ্যাদান সম্বন্ধে এই থিওরি উদ্ভাবিত ও ঐকমত্যে স্বীকৃত হইয়াছিল এবং এই থিওরি কার্য্যক্ষেত্রে পরিণত করিবার জন্য কোনরূপ বিশেষ আয়োজন উদ্যোগ করিতে হয় নাই। কোন ইস্কুল, কালেজ-মায় সেক্রেটারী, দরোয়ান, দপ্তরী আপিস, খাতা,—কোন যন্ত্র প্রতিষ্ঠার আবশ্বকত উপলব্ধ হয় নাই। ভারতবর্ষের ভূমিতে যেমন যথাকালে তৃণ গুল্ম উৎপন্ন হইত, তেমনি বিদ্যাম্বেষী যথাকালে বিদ্যাদাতার নিকট উপস্থিত হইয়া বিদ্যা গ্রহণ করিত ; কখনও বিদ্যান্বেষীরও অভাব হয় নাই, বিদ্যাদাতারও কখনও অভাব হয় নাই। সৰ্ব্বসাধারণের পক্ষে এই নিয়ম ছিল। আর যিনি বিশেষতঃ জ্ঞানপিপাস্ন, তিনি আপনার পিপাসার তৃপ্তির জন্য, কোন গোমুখী হইতে জাহ্নবীধারা নিঃস্তত হইতেছে, তাহ অন্বেষণ করিয়া লইতেন, এবং বিনীত ভাবে বিনীত বেশে সমিংহস্তে বাঞ্ছাকল্পতরু আচার্য্যের সমীপস্থ হইয়া জ্ঞানপিপাস মিটাইয়া লইতেন। যন্ত্রবদ্ধ প্রণালীতে বিদ্যাদান-প্রণালী ভারতবর্ষে যে একেবারে অপরিচিত, তাহা নহে। দেশে যখন বৌদ্ধধর্মের প্রবলত হইয়াছিল, সেই সময়ে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীগণের বিহারে ও সঙ্ঘারামে সহস্ৰ সহস্র বিদ্যার্থী বিদ্যালাভার্থ সমবেত হইত। এই সকল বিহারের ও সঙ্ঘারামের প্রতিষ্ঠার্থ কোটিপতি আপনার অর্থকোষ উন্মুক্ত করিয়া দিতেন, রাজ্য আপনার রাজ্যের অংশ ছাড়িয়া দিতেন, গৃহস্থ আপনার সর্বস্ব দান করিতেন। নানা দিগেশ হইতে বিদ্যার্থ সেখানে সমাগত হইত, কাব্যকলা মুখরিত হইত, বিচারবিতণ্ডার ফোয়ার ছুটিত, বুদ্ধির সহিত বুদ্ধির ঘাত-প্রতিঘাতে জ্ঞানাগ্নির বিস্ফুলিঙ্গ ছুটিত। স্থাপত্যবিদ্য ও ভাস্কৰ্য্যবিদ্য৷ সোঁধে, আটালিকায়, প্রাচীরে, বাতায়নে, গৃহদ্বারে আপনার সমস্ত ঐশ্বৰ্য্য উদঘাটিত করিত। শিক্ষক, পরীক্ষক, পরিদর্শক—এমন কি, প্রহরী, দপ্তরী কিছুরই অভাব ছিল না । • কিন্তু ভারতবর্ষের মুত্তিকায় এই যন্ত্রবদ্ধ শিক্ষাপ্রণালী স্থায়ী হয় নাই । ইহা ভারতবর্যের সৌভাগ্য কি দুর্ভাগ্য, তাহ বলিতে পারি না। কিন্তু ভারতবর্ষের ধাতুর সহিত বোধ করি ইহার সামঞ্জস্য হয় নাই ; ইহার মধ্যে যে কৃত্রিমতা ছিল, তাহা বোধ করি, ভারতবর্ষের ধাতুর সহিত মিশিতে পারে নাই। অথবা ইহার অভ্যন্তরে সেই প্রাণশক্তির অভাব ছিল, যাহা সত্য হইতে বল সঞ্চয় করে, সত্যের উপরে যাহার প্রতিষ্ঠা। আধুনিক চতুষ্পাঠীর শিক্ষাপ্রণালীকে আমি সেই প্রাচীন ভারতবর্ষের প্রাচীন শিক্ষাপ্রণালীর জীর্ণ শীর্ণ, রুগ্ন ভগ্ন, বিকলাঙ্গ সন্ততি স্বরূপ বলিয়া গ্রহণ করি। ইহাতে একটা বৃহৎ আদর্শের ছায়া দেখিতে পাই। ইহাতে একটা প্রাচীন মহৎ আদর্শের জীর্ণ পরিণাম দেখিতে পাই ; ইহার দোষ অনুসন্ধান করিবার কোন প্রয়োজন নাই। যে আদর্শের ইহা ধ্বংসাবশেষ মাত্র, সেই আদর্শ আমার চক্ষুতে অত্যন্ত মহীয়ান ; আমার চিত্তপটে সেই আদশের ছায়াপাত মাত্রে আমি আত্মসংবরণে অসমর্থ হই। বর্তমান কালের আদর্শকে তাহার পার্থে উপস্থিত করিতে আমার কুষ্ঠা ও লজ্জ বোধ হয়। বর্তমান কালে যে প্রাচীন আদর্শের ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান আছে, তাহাতে পুনরায় সঞ্জীবনী শক্তি সঞ্চার করা সম্ভবপর কি না, তাহা জানি না । হয় ত এ কালের প্রবর্তিত ও অনুমোদিত যন্ত্রবদ্ধ প্রণালীই একালের উপযোগী, কিন্তু এই প্রণালী যতদিন যন্ত্রমাত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত