পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨છે.8 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র কোন কালে বাঙ্গালা ভাষার ধাতুর সহিত মিলিতে চাহিবে কি না, তাহা বলিতে পারি না । কিন্তু যেমনই হউক—লাটিন নামগুলি বজায় রাখিয়াই হউক, অথবা তাহাদের অনুবাদের চেষ্টা করিয়াই হউক, উদ্ভিদতত্ত্বকে এবং প্রাণিতত্ত্বকে বাঙ্গালা সাহিত্যের মধ্যে স্থান দিতেই হইবে। ভূবিদ্যাবিং পণ্ডিতেরা বিবিধ আকরিকের ও বিবিধ শিলাখণ্ডের যে সকল নাম সৰ্ব্বদা ব্যবহার করেন, বাঙ্গালীর কোমল বাগ যন্ত্র তাহার উচ্চারণে ছিড়িয়া যাইবার আশঙ্কা আছে, তাহা স্বীকার করি। যাহার করাত এবং হাতুড়ি হাতে পাহাড়ে পাহাড়ে লাফাইয়া বেড়ান, তাহাদের দেহ ও মন আগেটের ও কোরগুমের কাঠিন্য পাইয়াছে সন্দেহ নাই। আমাদের বাগ যন্ত্রের এই কোমলতা দেখিয়া তাহাদের হৃদয় কোমল হইবে, এরূপ আশা করি না ; কিন্তু ঐ নাম গুলাকে কাটিয়া ছাটিয়া একটুকু মোলায়েম করিয়া লইলেই যদি আমাদের বাগিন্দ্রিয় এবং শ্রবণেন্দ্রিয় উভয়েই তাহ গ্রহণ করিতে সম্মত হয়, তখন বাঙ্গালা সাহিত্যেব প্রতি দৃষ্টি করিয়া তাহাদের কঠিন অন্তঃকরণকে একটু করুণরসার্জ করিতে আমি সনিৰ্ব্বন্ধ অনুরোধ করিতেছি । বাঙ্গালা সাহিত্যের বিজ্ঞানবিভাগ যে নিতান্ত দরিদ্র, এই আক্ষেপোক্তি সৰ্ব্বদাই শুনিতে পাওয়া যায়, অথচ এ পর্য্যন্ত ইহার প্রতিকারের সম্যকৃ ব্যবস্থা হয় নাই। শুনিতে পাই যে, বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ সম্প্রতি এ বিষয়ে যত্নপর হইয়াছেন। বাঙ্গালা সাহিত্যের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি-সাধন যাহার উদ্দেশু, সেই বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদের এ বিষয়ে উপেক্ষ মার্জনীয় হইতে পারে না। কয়েক বৎসর হইতে সাহিত্য-পরিষৎ বিজ্ঞানের বিবিধ বিভাগের ধারাবাহিক আলোচনার জন্য অভিজ্ঞ পণ্ডিতদিগের সাহায্য প্রার্থনা করিয়াছিলেন। শ্রযুক্ত হেমচন্দ্র দাসগুপ্ত এবং শ্ৰীযুক্ত ডাক্তার বনওয়ারীলাল চৌধুরী ব্যতীত আর কেহ পরিষদের প্রার্থনা পূর্ণ করিয়াছেন বলিয়া শুনি নাই। র্তাহারা উভয়েই সাহিত্য-পরিষদের নিতান্ত অন্তরঙ্গ বন্ধু ; কিন্তু তাহাদের নিকটেও পরিষৎ যেটুকু পাইয়াছেন, তাহা তৃষ্ণ নিবারণের পক্ষে প্রচুর নহে। শ্রযুক্ত ডাক্তার প্রফুল্লচন্দ্র রায় এবং সম্প্রতি অধ্যাপক শ্ৰীযুক্ত অপূৰ্ব্বচন্দ্র দত্ত দুইখানি গ্রন্থ দ্বারা পরিষদের প্রকাশিত গ্রন্থাবলী পুষ্ট করিয়াছেন। যদিও সম্প্রতি আমি পরিষদের সেবাকার্য্যে অশক্ত, তথাপি পরিষদের পক্ষ হইতে উপস্থিত পণ্ডিতমণ্ডলীর নিকট এ বিষয়ে সাহায্য ভিক্ষায় অধিকারী। বঙ্গদেশে বিজ্ঞানচর্চার এই জাগরণের দিনে সাহিত্য পরিষদের এই প্রার্থনা পূর্ণ হইবে, ইহাই আমার আশ । বাঙ্গালা সাহিত্যের বিজ্ঞানবিভাগের দারিদ্র্যমোচন আপনারাই করিতে পারেন। ইহা আপনাদের কৰ্ত্তব্যমধ্যে গণ্য করিয়া লওয়া উচিত। পারিভাষিক শব্দের অভাব এই বিষয়ে অস্তুরায় হইবে বলিয়া আমার বিশ্বাস নাই। যিনি শ্রদ্ধার সহিত মাতৃভাষার সেবাকার্ষ্যে নিযুক্ত হইয়। গ্রন্থরচনায় প্রবৃত্ত হইবেন, তাহার মনের ভাব আপনা হইতে শবারূপে লেখনীমুখে আৰিভূত হইবে। ঋগ্ৰেছসংহিতার দশম মণ্ডলে একটা কুক্ত রহিয়াছে, অন্তঃশরীরের গুহামধ্যে, চিত্তের নিতৃত প্রদেশে যে অশরীরী ভাবরাশি প্রচ্ছন্নভাবে গুপ্ত আছে, সুজা অকস্মাং শরীর গ্রহণ করিয়া শম্বক্ষপে ও নামরূপে আত্মপ্রকাশ করিতেছে,