পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రిe রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র সেই পুণ্যক্ষেত্র প্রয়াগসঙ্গম । তবে ভারতবাসী বুদ্ধের উপদেশ সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করে নাই। অন্য জাতি ষে মাত্রায় গ্রহণ করিয়াছে তদপেক্ষা অধিক মাত্রায় গ্রহণ করিয়াছে, এই পৰ্য্যস্ত । চীনে, তিব্বতে, অসভ্য জাপানে বৌদ্ধধৰ্ম্ম বর্তমান, বুদ্ধের জন্মভূমিতে বৌদ্ধধর্থের সমাদর নাই, এই বলিয়া একটা হাহাকাব আজি কালি প্রথা হইয়া দাড়াইয়াছে। কিন্তু এই হাহারবের ভিত্তির ঠাহর পাওয়া যায় না। ভিন্ন দেশে বৌদ্ধ রিলিজন নামে একটা কিছু প্রচলিত থাকিতে পারে ; কিন্তু বুদ্ধদেবের প্রচারিত ধর্মোপদেশ ভারতবর্ষে যে রূপে যে ভাবে গৃহীত হইয়াছে, তাহা কুত্ৰাপি হয় নাই, ইহা অকুতোভয়ে নির্দেশ করা যাইতে পারে। এই নিরীহ, দাস্ত, শাস্ত, ধীর, ক্ষমাশীল, নিষ্ঠাবান প্রকাও হিন্দুজাতিই ইহার প্রমাণ । ভালর মন্দ আছে । আৰ্য্যাবৰ্ত্তে বৌদ্ধধৰ্ম্মের আবির্ভাবের ফল যে সৰ্ব্বতোভাবে সুন্দর হইয়াছে, তাহ বলা যায় না। বুদ্ধদেব পরার্থপরতা শিখাইয়াছিলেন। বৌদ্ধ মাত্রই পরার্থপর হইয়াছিল, বলা যায় না। মকুন্তচরিত্র এইরূপ। শুনা যায়, যীশুখ্ৰীষ্ট উপদেশ দিয়াছিলেন—এক গণ্ডে চপেটাঘাত পাইলে অপর গণ্ড পাতিয়া দিবে। কিন্তু নিব্বিয়ে চপেটাঘাত-সহিষ্ণুতা খ্ৰীষ্টানের লক্ষণ বলিয়া কোন কালে গণ্য হইয়াছে, ইতিহাসে এরূপ কথা লেথে না । বিনা বাক্য ব্যয়ে নিরীহের গণ্ডে চপেটাঘাত দ্বারা পরম স্বথের অনুভবলিন্স, যদি কেহ থাকেন, তিনি খ্ৰীষ্টান। যাহাই হউক, ভারতবাসী মাত্রই বুদ্ধপ্রদশিত মার্গ অবলম্বন করে নাই। তবে মিলিয়া মিশিয়া বুদ্ধের উপাসনা আরম্ভ করিয়াছিল। মন্দির গড়িয়া বুদ্ধমূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা করিয়াছিল। ধূপ ধূনা আরতি দ্বারা প্রসাদ লাভের চেষ্টা করিয়াছিল। যন্ত্র মন্ত্র তন্ত্রের স্বষ্টি দ্বারা নানা কৌশলে অতিপ্রাকৃত অনুগ্রহ লাভ করিয়া স্বার্থসংরক্ষণের চেষ্ট পাইয়াছিল। বড় বড় রাজ্য স্থাপিত হইয়াছিল, বিলাসিতার পরাকাষ্ঠী হইয়াছিল। জ্ঞানচর্চার খর স্রোত প্রতিহত হইয়াছিল। শূত্র ও অস্ত্যজ সমাজ-সোপানে উঠিয়াছিল, সঙ্গে সঙ্গে ব্রাহ্মণের অধোগতি হইয়াছিল। আৰ্য্য অনাৰ্য্য মিশ্রিত হইয়া বৰ্ত্তমান হিন্দুজাতির উৎপত্তি হইয়াছিল, কিন্তু আৰ্য্য শোণিতের বিশুদ্ধতার সহিত আৰ্য্যপ্রতিভার খর জ্যোতি মলিনত্ব পাইয়াছিল। প্রাচীন বৈদিক ধর্মের নূতন ভাবে পুনরভু্যদয়ের সময়, ব্রাহ্মণ-মহিমার পুনঃস্থাপনের সময়, দুই একবার সেই প্রতিভা, নিৰ্ব্বাণোন্মুখ দীপশিখার মত, বৃষ্টিশেষে তড়িল্পতার মত দেখা দিয়াছিল বটে, কিন্তু তাহ রীতিমত স্থায়ী হয় নাই, সুপ্ত গৌরব ফিরিয়া আসে নাই ; মলিন প্রতিভা পূর্বের মত উজ্জল হয় নাই। বৈদিক কালের অতিপ্রাকৃতের নিকট অসহায় স্তুতিবাদের সহিত দর্শনোপনিষৎপ্রচারিত জ্ঞান ও বুদ্ধ-প্রচারিত প্রীতি ও বৌদ্ধগণ-প্রচারিত যন্ত্র মন্ত্র উপাসনা সম্মিলিত করিয়া বর্তমান হিন্দুধর্মের উৎপত্তি। আধুনিক হিন্দু সংসার মিথ্যা ও স্বপ্ন বলিয়া জানে, আপনাকে কৰ্ম্মবশে দুঃখবত্মে ভ্ৰাম্যমান বলিয়া স্বীকার করে, এবং জ্ঞান বিনা মুক্তি নাই, সৰ্ব্বদা মুখে কহয় থাকে। হিন্দু পরোপকারে কুষ্ঠিত লহে, সহিষ্ণুতায় ধরিত্রীকে পরাভব করে, সংযম ব্লতোপবাল একমাত্র কৰ্শ্ব রলিয়া নির্দেশ করে। হিন্দু রাজার নিকট দগুসহিষ্ণু প্রজ, গুরুর নিকট বিনীত শিল্প,