নানাকথা : সাহিত্য-কথা \9)。 জগৎকে ষে সুন্দরই দেখিতে হইবে, এমন কোন আইন বিধাতা প্রণয়ন করেন নাই এবং কোন ব্যক্তি জগতের কোন অংশকে স্বনার না দেখিয়া অন্য কোন মূৰ্ত্তিতে নিরীক্ষণ করে বলিয়া তাহাকে মনুষ্যত্বের পদবীতে নিম্নতর সোপানে বসাইতে হইবে, এইরূপও বলা যায় না। বাহা জড় জগতের সহিত আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে বটে ; কেন না, উহার সহিত আমাদের নিত্য আদান প্রদান চলিতেছে ; আমাদের আত্মা প্রতিনিয়ত উহার সহিত কখন বিরোধ, কখন বা মৈত্রী স্থাপন করিয়া, অর্থাৎ রাজনীতিশাস্থের বিধানমতে সাম-দানাদি চতুবিধ উপায়ই অবলম্বন করিয়া, আপনার স্থিতি পুষ্টি ও অভিব্যক্তি সাধন করিয়া লইতেছে। কিন্তু জড়ভাগ ভিন্ন সমগ্র জগতের আর একটা অংশ আছে, যাহার সহিত আমাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ট । আমি ষে আত্মা নামধেয় পদার্থটুকু লইয়া আপনাকে মনুষ্য বলিয়। পরিচয় দিয়! থাকি, কোন কারণে আমার আত্মীয় কুটুম্ব প্রতিবেশীতেও তজ্জাতীয় অর্থাৎ আমারই আত্মার সমান ধৰ্ম্মবিশিষ্ট পদার্থের অস্তিত্ব নিবিববাদে স্বীকার করিয়া তাহাদিগকেও ঠিক আমরাই সমান মনুষ্যপদবীতে স্থান দিই। এবং আমার এই আত্মীয় কুটুম্ব প্রতিবেশী লইয়া অংশত: জড়ধৰ্ম্মী, অংশত জীবধৰ্ম্মী ও অংশত মনুষ্যধৰ্ম্মী – যে একটা সমষ্টির স্বষ্টি করিয়া লইয়াছি, তাহার সহিত আমার সম্বন্ধ অত্যন্ত অতিরিক্ত পরিমাণে নিকট করিয়া তুলিয়াছি। বরং অন্ন জল পরিত্যাগ করিয়৷ দুই দশদিন কাটাইতে পারি, কিন্তু আমার প্রতিবেশীকে ত্যাগ করিয়া এক মুহূৰ্ত্ত যাপন করা আমার পক্ষে নিতান্তই অসাধ্য। কিন্তু এই সম্বন্ধটা কিরূপ ? প্রকৃত কথা যে, এই সম্বন্ধ ত্যাগ করিলে আমার নিজের অস্তিত্বও বুঝি থাকে না । যেখানে অন্ন জল, ফল ফুল, গিরি ও নির্বর যথেষ্ট সংখ্যায় বর্তমান আছে ; যেখানে মলয় বহে ও পার্থী গায়, এমন কি, এলা লতাও চন্দনতরুকে আলিঙ্গন করিয়া রহে ও পুষ্পস্তবকাবনম্র লতা পবনহিল্লোলে সঞ্চারিণী হয় ; সেই স্থানেও আমার সঙ্গিহীন ও প্রতিবেশীহীন জীবন কল্পনায় আনিতে গেলে শরীর বিভীষিকায় রোমাঞ্চিত হইয় পড়ে। সুতরাং আমার সঙ্গীর সহিত ও প্রতিবেশীর সহিত সম্বন্ধ বড় নিকট। স্নেহ, প্রেম, দয়া, বাৎসল্য প্রভৃতি যাহা কিছু আমাতে মধুর ও যাহাকিছু আমার উপজীব্য, সমস্তই সেই সম্বন্ধ হইতে উদ্ভূত ; কিন্তু ইহাও কি প্রকৃত নহে যে, হিংসা ও দ্বেষ ও দম্ভ প্রভৃতি অন্য যাহা কিছু আমার আত্মাকে ক্ষুব্ধ, ফুঃ, পীড়িত ও জর্জরিত করে, তাহারও উৎপত্তি সেইখানে ? ইহাও কি সত্য নহে যে, সেই সম্বন্ধবশেই আমার শ্রবণ পূর্ণ করিয়া সেই অন্তর্ভেদী তীব্র দুঃখের কোলাহল উঠিতেছে ; আমার জ্ঞানজীবনের প্রথম মুহূর্তেই যাহার আরম্ভ ও শেষ মুহূৰ্ত্তেই যাহার সমাপ্তি। হায়, মহন্তজাতিমধ্যে এমন সৌভাগ্যশীল কয় জন আছেন, র্যাহাকে সংসারচক্রে ঘুরিতে ঘুরিতে দুঃখের আবর্তে পড়িতে হয় নাই । তাহার সৌভাগ্যশীল প্রতিবেশী যে স্বন্দর জগতের ও সুন্দরী প্রকৃতির রূপরাশি দেখিয়া বিমুগ্ধ রহিয়াছেন, সেই প্রকৃতিকে নিষ্ঠুর ও নিৰ্ম্মম ও ভীষণ দেখিয়া তিনি আতঙ্কে বিমূঢ় হয়েন নাই। বস্তুতঃ জগতের এই অংশে উপস্থিত হইয়া উহাকে স্বন্দর বলিব, কি ভীষণ বলিব,
পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।