পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৪ রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র সেই আঁধারের সময় স্বযোগ বুঝিয়া দুই চারিটা প্ররোচনা দ্বারা ছিদ্র-পথটা আর একটু প্রসারিত করিয়া দিল। ঠিক তদবধি ঘটনার পর ঘটনার ধাক্কা সময়মত আসিয়া বেচারীর চিত্তকে একেবারে ক্ষুব্ধ ও আন্দোলিত করিয়া দিল । শেষের আন্দোলনটার বেগ এতখানি বাড়িয়া গেল যে, বেচারী আর ফিরিয়া স্বস্থানে আসিতে পারিল না ; একেবারে উন্টাইয়া পড়িল । তখন আর আশা নাই । হিমাচলের প্রস্থদেশে গভীর ফাটগুলা হা করিয়া থাকে ; উপরে পর্য্যটকের একবার পদস্থলন হইলে আর নিস্তার থাকে না । সেইরূপ একবার যখন পদস্খলন হইল, তখন অধোগতি রোধ করে কাহার সাধ্য ? শয়তানের অনুচরেরা মানুষকে সৰ্ব্বদাই ফেলিয়া দিবার চেষ্টায় আছে ; কিন্তু হায়, শয়তান র্যাহার প্রতিদ্বন্দ্বী, সেই ঠাকুরটি তখন নিজের অমুচর প্রেরণ করিয়া হতভাগ্যকে অধঃপতন হইতে রক্ষা কৰ্ত্তব্য বোধ করেন না । ঠিক এই হিসাবে আমাদের কৃষ্ণকান্তের উইল ম্যাকৃবেথের সহিত তুলনীয়। শেষ অধ্যায়ে কৃষ্ণকান্তের উইলের নায়ককে আমবা পাপের মূৰ্ত্তিমান অবতার স্বরূপে দেখিতে পাই। এমন কি, আমাদের অর্থাৎ সমালোচক সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন ব্যক্তি খুবই অল্প আছেন, যিনি নিঃসঙ্কোচে ও নিঘূর্ণভাবে তদবস্থ গোবিন্দলালের সঙ্গে দাড়াইয়া দুটা মিষ্ট কথা কহিতে সাহস করিতে পারেন। যদি গোবিন্দলালের সহিত কলিকাতার রাস্তায় ঘটনাক্রমে আমাদের চোখাচোখি হয়, তৎক্ষণাৎ আমরা ঘৃণায় চোখ ফিরাইয়া চলিয়। যাই । হয়ত পূৰ্ব্বে এক সময় ছিল, যখন গোবিন্দলালের বৈঠকখানায় প্রত্যহ বিনা নিমন্ত্রণে হাজির হইয়। তিন ঘণ্টা ধরিয়া তাস পিটিয়া আসিতাম, এবং বুড়া কৃষ্ণকান্তের শ্রান্ধের সময় লুচি মণ্ডার যথেষ্ট সদগতি করিয়া আসিয়াছি , কিন্তু এখন দৈবক্রমে দেখা হইলে তাহাকে দুইটা কায়িক কুশল সংবাদ জিজ্ঞাসা কবিতেও সঙ্কোচ হয়। কি জানি, অপরে পাছে দেখিয়া ফেলে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অধঃপতনের আরম্ভে গোবিন্দলালে যে পরিমাণ মনুষ্যত্ব ছিল, তোমাতে আমাতে ঠিক ততখানি বৰ্ত্তমান আছে কি না সন্দেহ। এবং এমন কি প্রমাণ পাইয়াছ যে, তাহার সেই মনুষ্যত্ব একবারে পশুত্ব বা পিশাচত্বে পরিণত হইয়াছে। গোবিন্দলালকে দেবতা বলিয়া পূজা বা অতুকরণ করিতে বলিতেছি না ; তবে তাহার ভাগ্যে যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা তোমার আমার ভাগ্যেও যে কখন ঘটিতে না পারে, এমন বিশ্বাসের কারণ নাই। এবং তাহার অধঃপতনের কারণই বা কি ? অনুসন্ধানে দেখা যায়— তাহার দয়া, তাহার পরোপকারবৃত্তিও আর একটু সামান্য ছিদ্র মাত্র, যে ছিদ্রপথে দেবতাবিশেষ অব্যর্থ শর প্রেরণ করিয়াছিলেন। কিন্তু ভাবিয়া বুঝা উচিত যে, সেই দেবতার নিকট শাৰ্দ্দল-চৰ্ম্ম ব্যবধানবতী দেবদারুদ্রুম-বেদিকায় উপবিষ্ট সংযমিশ্রেষ্ঠ৪ সৰ্ব্বতোভাবে পরিত্রাণ পান নাই। সুতরাং স্বযোগক্রমে প্রেরিত শরের সন্ধানের সহিতই গোবিন্দলালের চিত্তটা সাম্যাবস্থা হইতে ভ্ৰষ্ট হইল। একটু ক্ষুব্ধ ও চঞ্চল হইল। তারপর ঘটনার পর ঘটনা, ধাক্কার পর ধাক্কা, ঠিক সময় বুঝিয়া ও সুযোগ বুঝিয় ধাক্কা। বারুণীতীরে কুহু ডাক, আর উইল চুরি, জার রোহিণীর আত্মহত্যা চেষ্টা, আর ফুল্পবিম্বাদিঘটিত ব্যাপার, আর মিথ্যা অপবাদ